জেনে রাখুন : সপ্তাহের সাত দিনের নামকরণ কীভাবে হল?
এস এ সৌরভ : সাত দিনে সপ্তাহের প্রচলন প্রথম ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় এবং ইহুদিদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। ব্যাবিলনীয়রা চাঁদ দেখে মাসের হিসাব করত। প্রথম যেদিন চাঁদ উঠত, সেদিন থেকে শুরু হতো মাসের হিসাব। এর ঠিক সাত দিন পর ক্রমবর্ধমান অর্ধচন্দ্রের আবির্ভাব হতো। ১৪তম দিনে পূর্ণচন্দ্রের দেখা মিলত। ২১তম দিনে পরিবর্তিত হয়ে ক্ষীয়মাণ অর্ধচন্দ্র দেখা যেত এবং ২৮তম দিনে চাঁদের শেষ পরিবর্তিত রূপটি দেখা যেত। সাতদিন পর পর প্রতিটি ধাপ শুরু হতো বলে তারা সপ্তাহের হিসাব করত সাত দিনে। ইহুদিরা ধর্মীয় রীতি থেকে সাত দিনের একটি চক্র হিসাব করত। অর্থাৎ ইহুদিদের সপ্তাহ সাত দিনে হিসাব করার পেছনে ধর্মীয় কারণ ছিল। রোমানরা সপ্তাহের হিসাবটি করত আট দিনে এবং কখনও কখনও নয় দিনেও। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্যালেন্ডারের প্রচলনের পর থেকে আট দিনে সপ্তাহের ধারণাটি জনপ্রিয়তা হারায়। প্রথম খ্রিস্টান রোমান রাজা কনস্টেন্টাইনের সময় সাত দিনে সপ্তাহের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। তখন পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্ম এবং রোমানদের প্রভাব থাকার কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় এর প্রচলন ঘটে।
যেভাবে এলো সপ্তাহে একদিন ছুটির রীতি
ব্যাবিলনীয়রা সপ্তাহের ছয় দিনকে শুভ মনে করলেও একটি দিনকে অশুভ মনে করত। সেই দিন তারা বেচাকেনা ছাড়া সব ধরনের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখত। ইহুদিদের কাছে সপ্তাহের একটি দিন ছিল ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তারা ওই দিন পার্থিব যে কোনো কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখত। এই দিনকে ‘সাব্বাত ডে’ বলা হয়। এ দিনটি উপলক্ষে নারীরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বিশেষ কিছু রান্নাবান্না করত। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতো। এভাবেই ইহুদি এবং ব্যাবিলনীয়দের অনুসরণ করে সপ্তাহের একটি দিন ছুটির রীতি প্রচলিত হয়।
সপ্তাহের সাত দিনের নামের প্রচলন যেভাবে
আগে সমাজে দেব-দেবীদের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। তখনকার মানুষ দিন শুরু করত দেবতার নাম নিয়ে, দিন শেষ করত তাদের স্মরণ করে। তাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকত দেবতারা। তাই সপ্তাহের সাতটি দিনের নামকরণও করা হয় তাদের স্মরণ রেখে। একে তারা শুভ বলে মনে করেছিল। যেমন-
রোববার : গ্রিক ও লাতিন শব্দ থেকে এ নামটির উদ্ভব। গ্রিক ও লাতিন ভাষায় এ দিনটিকে বলা হয় সূর্যের দিন [সানডে)। সূর্য দেবতার স্মরণে রাখা হয় এ নাম। স্প্যানিশ ও ফ্রেঞ্চ ভাষায়ও এ অর্থে দিনটিকে ব্যবহার করা হয়। খ্রিস্টান ও ইহুদিরা এ দিনটিকে ‘ঈশ্বরের দিন’ [লর্ডস ডে] ও ‘সাব্বাত ডে’ হিসেবে পালন করে। সেই সানডে-ই আমাদের সপ্তাহের রোববার।
সোমবার : মানডেকে মুন’স ডে বা চন্দ্রদিনও বলা হয়। চন্দ্রদেবীর নামে করা হয় এই নামকরণ। লাতিন ভাষায় একে dies lunae বা চন্দ্রের দিন বলে। গ্রিক ভাষায় বলে hemera selenes, যা একই অর্থ প্রকাশ করে। যাকে স্প্যানিশ ভাষায় lunes Ges Ges ফ্রেঞ্চ ভাষায় lundi বলা হয়। ইংরেজিতে মানডে আর বাংলাতে সোমবার।
মঙ্গলবার : এই দিনটির নামকরণ করা হয় ঈশ্বরের নামে। যুদ্ধ ও আকাশের দেবতা Tiu অথবা Twia এর নামে দিনটির নামকরণ করা হয়। একে লাতিন ভাষায় dies merti বলে। আর গ্রিক ভাষায় hemera areos বলা হয়। এটিই আমাদের মঙ্গলবার।
বুধবার : ওডিন নামক একজন দেবতার নাম থেকে এই দিনের নামকরণ করা হয়। তার নামানুসারে একে ওডেন’স ডেও বলা হয়। স্প্যানিশ ভাষায় একে বলা হয়, Miercoles এবং ফ্রেঞ্চ ভাষায় একে বলা হয়, Mercredi বাংলাতে এই বারকে বুধবার হিসেবে আমরা নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার : এই দিনটির নামকরণ করা হয় বজ্র ও বিজলির দেবতা থরের নামে। এই দিনটিকে লাতিন ভাষায় জুপিটার এবং গ্রিক ভাষায় জিউস বলা হয়। এটি আমাদের বৃহস্পতিবার।
শুক্রবার : ভালোবাসা, বিয়ে এবং উর্বরতার দেবী ফ্রেয়ার নামে এই দিনটির নামকরণ করা হয়। লাতিন ভাষায় এই দিনটি দেবী Venus-এর নামে অর্থাৎ dies veneris এবং গ্রিক ভাষায় দেবী Aphrodite-এর নামে অর্থাৎ hemeres aphrodite নামে পরিচিত। ইংরেজিতে ফ্রাইডে আর বাংলাতে শুক্রবার।
শনিবার : এই দিনটিকে ‘স্যাটার্ন’স ডেও বলা হয়ে থাকে। শৌর্য-বীর্যের প্রতীক, রোমান দেবতা স্যাটার্নের নামানুসারে এই দিনের নামকরণ করা হয়। লাতিন ভাষায় এই দিনটিকে বলা হয় dies saturni। ইংরেজিতে স্যাটার ডে আর বাংলাতে শনিবার।
সূত্র : ইন্টারনেট