কোরবানির পশুর বাহারী নামে সরব পশুর হাট
ডেস্ক নিউজ : জমে উঠেতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। এরই মধ্যে কোরবানির পশু বিক্রিতে বাহারী নামে সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। পশুর মালিকরা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পশুর রাখছেন সুন্দর সুন্দর নামও। পশুর চলন বলন আর স্বভাবের ওপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে ওইসব পশুর নাম। সম্রাট, বস, লক্ষী, জায়েদ খান, সাকিব খান, বাদশা,বাহাদুর, রাজাবাবু, কালো মানিক, টাইগার, রাজা,ভাগ্য রাজ, শান্তসহ বাহারি নাম ওইসব পশুর রয়েছে।
৩২ মণের সম্রাটকে দেখতে হাটে মানুষের ভিড়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে আখাউড়া পশুর হাট। পৌরশহরের শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ মাঠের পশু হাটে মঙ্গলবার সকাল থেকে পশু উঠতে থাকে।
স্থানীয় খামারিসহ দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে উপস্থিত হয়। মাঠজুড়ে শুধু গরু আর গরু।
লাল, কালো, সাদা মিশ্র রঙের ছোট বড় গরুতে সয়লাব কলেজ মাঠ। সেই সঙ্গে পশুর হাটে প্রচুর সমাগম ঘটে।
সাপ্তাহিক পশুর হাট হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন। তবে, বেচাকেনা কিছুটা কম হচ্ছে, ক্রেতারাও ছাড়তে চাইছেন না, আবার বিক্রেতাও ঘুরে ঘুরে দর দাম যাচাই দেখে সময় কাটাচ্ছেন।
এদিকে মঙ্গলবারের পশুর হাটে সাদা কালো ফিজিয়ান জাতের বিশাল আকৃতির একটি ষাঁড় উঠে। এটি হাটের সবচেয়ে বড় গরু বলে মন্তব্য করেন দর্শনার্থীরা। গরুটির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ সেলফি নেন। গরুটিকে দেখার জন্য প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন। এক পলক দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন।
ষাঁড়টির মালিক কসবা উপজেলার টিঘরিয়া গ্রামের খামারি শাকিল আহমেদ বলেন, গরুটির ওজন প্রায় ৩২ মণ। তিন বছর ধরে তিনি গরুটিকে পালন করছেন। দেশীয় খাবার খাইয়েছেন কোনো কৃত্রিম খাবার দেননি। গরুটির দাম চান ১০ লক্ষ টাকা।
বেলা ১টা পর্যন্ত ৬ লক্ষ টাকা দাম হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে, আর কিছু দাম বেশি পেলে তিনি গরুটি বেঁচে দেবেন বলে জানান।
এদিকে গরুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল মিয়া বলেন, গরুটি খুবই বড়। এত বড় গরু আগে আর দেখিনি। যেমন বড় তেমনি উঁচু এবং লম্বা। এর স্বাস্থ্যও বেশ মোটাতাজা।
গরু কিনতে আসা আব্দুল মমিন বাবুল বলেন, গরু দেখতেছি। এখনই পছন্দ করতে পারিনি। তবে দাম বেশ মনে হচ্ছে।
‘জায়েদ খানের’ চেয়ে ‘শাকিব খানের’ দাম বেশি!
শিরোনাম দেখে হয়তো বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন। ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান সবার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান, সেটা সব চলচ্চিত্রপ্রেমীদেরই জানা। ঢাকাই সিনেমার অপর নায়ক জায়েদ খান তার চেয়ে পারিশ্রমিকে অনেক পিছিয়ে থাকেন, সেটিও সবার জানা। এবার শাকিব খানের নাম রাখা গরুও দামে এগিয়ে আছে জায়েদ খানের নামে রাখা গরুর চেয়ে।
মূল ঘটনা হলো, খামারিরা অনেকেই তাদের প্রিয় পোষ্যটির নাম রাখেন পছন্দের তারকাদের নামে। যা বিগত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। আর এসব নাম প্রকাশ্যে আসে কোরবানির ঈদের আগেই। ঘটনা তাই হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশুর হাটে ‘জায়েদ খান’ ও ‘শাকিব খান’ নামের দুটি ষাঁড় উঠেছে। ঢাকাই সিনেমার এই দুই চিত্রনায়কের নামে নাম রাখা ষাঁড় দুটি নবীনগর উপজেলার আহাম্মদপুর পশুর হাটে এখন ক্রেতাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
‘শাকিব খান’ নামের গরুটির ওজন প্রায় সাড়ে ১৭ মণ আর ‘জায়েদ খান’ নামের গরুর ওজন ১৫ মণেরও বেশি। ‘শাকিব খান’ নামের গরুটির সাড়ে ৩ লাখ ও ‘জায়েদ খান’ নামের গরুটির দাম ৩ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ‘শাকিব খান’ নামের গরুর দাম উঠেছে ২ লাখ ২০ হাজার, আর ‘জায়েদ খান’ নামের গরুর দাম উঠেছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
গরুর নাম ‘পদ্মা’ ও ‘সেতু’, দাম ২৮ লাখ টাকা
সোমবার (৪ জুলাই) রাতে রাজধানীর দনিয়া কলেজ মাঠে পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আকারের সারি সারি গরু রয়েছে। পাশেই ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। লোকজন এসে পশু দেখছেন। বড় আকারের পশু দেখলেই মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে সেখানে।
ফরিদপুরের ভাঙার মালিগ্রাম থেকে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী জাকির মাতুব্বর। এর মধ্যে বড় সাইজের দুটি গরু রয়েছে। শখ করে একটি গরুর নাম রেখেছেন ‘পদ্মা’, আরেকটির নাম ‘সেতু’। নাম শুনে মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। হাটে সাড়া ফেলেছে এই পশু দুটি। এ কারণে মানুষ ভিড় করছেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় গরু দুটির মালিক জাকির মাতুব্বরের। তিনি বলেন, ‘রোববার ১৫টি গরু নিয়ে এসেছি। আশা করছি ভালো দাম পাবো।’
গরু দুটির নাম ‘পদ্মা’ ও ‘সেতু’ রাখার কারণ জানতে চাইলে জাকির মাতুব্বর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। আমার গরু দুইটাও বিশাল বড়। তাই নাম রেখেছি ‘পদ্মা’ ও ‘সেতু।’
তিনি বলেন, ‘গরু দুটির বয়স সাড়ে ৪ থেকে ৫ বছর। এক বছর আগে কিনে লালন-পালন করি। সাদাটা ফিজিয়ান এবং লালটা শাহিয়ান জাতের। প্রতিদিন ওদের একটার পেছনে খরচ হয়েছে ৭০০/৮০০ টাকা। পদ্মার ওজন ২৫ মণ। ওর দাম চাচ্ছি ১৬ লাখ। আর সেতুর ওজন ১৫ মণ। ওটার দাম চাচ্ছি ১২ লাখ। লোকজন এসে দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছেন।’
গরু দুটি দেখতে আসা সুমন নামে এক তরুণ বলেন, ‘হাটে বন্ধুদের সঙ্গে গরু দেখতে এসেছি। পরে অনেকেই বলছেন ‘পদ্মা’ ও ‘সেতু’র কথা। সেজন্য অন্য গরু দেখার আগে আমরা এই দুইটা গরু দেখতে এসেছি। অনেক বড় গরু দুটি। দেখে ভালো লাগছে।’
১৩০০ কেজির চিরকুমার, দাম ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা
সাড়ে চার বছর আগে কালো- সাদা মিশ্রণের ষাঁড়টি ১ লাখ টাকায় কেনেন শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমরী মুদিপাড়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম মিয়া । আদর করে তিনি অষ্ট্রেলিয়ান হলষ্টেল ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির নাম রাখেন ‘চিরকুমার’। এই কয়েক বছরে ষাঁড়টির লালন পালন করতে গিয়ে মায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন ওই কৃষক। তারপরও এবারের কোরবানির হাটে আদরের ‘চিরকুমার’কে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এজন্য তিনি দাম হেঁকেছেন ১০ লাখ টাকা।
ভদ্র আর দুষ্টু, দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ
শখ করে দুই গরুর নাম রাখা হয়েছে ভদ্র ও দুষ্টু। শান্ত স্বভাবের হওয়ায় একটির নাম ভদ্র। আর চঞ্চল বলেই অন্যটির নাম দেওয়া হয়েছে দুষ্টু। গরু দুটির মালিক রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের খামারি রওশানুল ইসলাম (৩৮)।
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে অনেকেই গরু দুটি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। রওশানুল ইসলাম দুই গরুর মধ্যে ভদ্রর দাম হাঁকছেন ১৫ লাখ, আর দুষ্টুর দাম ১০ লাখ টাকা।
খামারি রওশানুল বলেন, তিনি ছয় বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি পালন করে বড় করেছেন। স্বভাবে শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় গরুটির নাম দিয়েছেন ভদ্র। আর চার বছর থেকে লালন–পালন করা ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের অন্য গরুটির নাম দিয়েছেন দুষ্টু। এ দুটি গরু ছাড়াও খামারে তাঁর আরও ১০টি বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে।
হাটে না তুললেও খামারেই গরু দুটি দেখতে মানুষ ভিড় করছেন। সেই সঙ্গে দূরদূরান্ত থেকেও ক্রেতারা আসছেন। ভদ্রের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। আর দুষ্টুর দাম ১০ লাখ হাঁকানো হলেও ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন ক্রেতারা। তবে ঈদের আগেই কাঙ্ক্ষিত দামে গরু দুটি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন রওশানুল।
ডায়মন্ডের ওজন ২৫ মণ
মুন্সিগঞ্জ : কালো ও সাদা বর্ণে উজ্জ্বল এবং শারীরিকভাবে মোটাতাজা হওয়ায় গরুটিকে দেখতে আকর্ষণীয় লাগে। পরম মমতায় লালন-পালন করা মালিক এর নাম দিয়েছেন ‘ডায়মন্ড’। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনি একে বিক্রি করবেন। তাই ২৫ মণ ওজনের ডায়মন্ডের দাম হেঁকেছেন ৮ লাখ টাকা।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার যশলং ইউনিয়নের সেরজাবাদ গ্রামের খামারি বিল্লাল গাজীর খামারে দেখা মেলে ডায়মন্ডের। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া ডায়মন্ডকে দেশীয় ঘাস আর খৈল-ভুসি খাইয়ে বড় করেছেন। দুই বছর বয়সী গরুটিকে দেখতে বিল্লালের খামারে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায়।
বিল্লাল গাজী জানান, জমির ঘাস, খৈল, ভুসি খাইয়ে ষাঁড়টিকে এত বড় করেছি। এটাকে কোনো ভেজাল ইনজেকশন দেইনি। কিংবা সার, ফিট অন্য কিছু খাওয়াইনি। বাজারে গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি। ন্যায্য দাম পেলে এবারের ঈদে ষাঁড়টির বিক্রি করে দেব।
নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় ‘কালু’
পঞ্চগড় : পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ঠেকরপাড়া গ্রামের খামারি মোকাম্মেল প্রধান। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তার খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে ২৭ মণ ওজনের একটি গরু। দেখতে কালো হওয়ায় খামারি ভালোবেসে নাম রেখেছেন ‘কালু’। তার নাম ধরে ডাকলে সাড়াও দেয়। এমনকি কেউ তার দাঁত দেখতে চাইলে মাথা উঁচিয়ে দাঁত দেখায়।
খামারে গিয়ে দেখা যায়, কালুর পরিচর্যায় ব্যস্ত মোকাম্মেল প্রধান ও তার ছোট ভাই মনির প্রধান। তাদের খামারে আরও ৪০টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে কালু সেরা। কালুর সঙ্গে তাদের সখ্যতাও বেশ। তাদের কথা মতো সাড়া দেয় সে, দেখতে চাইলে দাঁতও বের করে দেখায়।
খামারি মোকাম্মেল প্রধান বলেন, ৮ মাস আগে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে কালুকে কিনে আনেন। উদ্দেশ্য মোটাতাজা করে কোরবানির ঈদে বিক্রি করবেন। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে এলেও কেউ এখনো কাঙ্ক্ষিত দাম বলেননি। ৬ লাখ টাকা হলেই কালুকে বিক্রি করব।