বিচারকের নামে পবা থানার ওসির জিডি!
এর আগে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও মামলা রেকর্ডে গড়িমসি ও বাদির কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন ওসি আলমগীর। বিষয়টি বাদি আদালতকে জানালে গত ২ জুলাই বিচারক মামলার শুনানী চলাকালে ওসি আলমগীরের সঙ্গে মুঠোফোনে যুক্ত হন। এসময় বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেন ওসি।
এরই প্রেক্ষিতে পরদিন তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে কর্তব্য কাজে অবহেলা ও গাফেলতির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহীর পুলিশ সুপার ও রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর আদেশ দেন আদালত।
পরে আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা চান ওসি আলমগীর। এছাড়া অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেন ওই দিনই। আর পিঠ বাঁচাতে তার আগেই থানায় জিডি করে কপি পাঠিয়ে দেন পুলিশ সদর সার্কেল ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। বিষয়টি চেপে রাখার জোর তৎপরতাও চালান ওসি।
তবে মঙ্গলবার তা প্রকাশ হয়ে যায়। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ রাজশাহীর বিচারিক কর্মকর্তাসহ আইনজীবীরাও। এ ঘটনাকে নজীরবিহীন বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি আলমগীর।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহীর পবা থানার দুর্গা পারিলা গ্রামের এমাজউদ্দিন ৯ জনের বিরুদ্ধে গত ২ জুন দ-বিধির ৩৭৯ সহ আরো কয়েকটি ধারায় আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন। রাজশাহীর আমলী আদালত-৪ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তা আমলে নেন। পরে তা মামলা আকারে নথিভুক্ত করতে পবা থানাকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্ধারিত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন আদালত।
তা সত্ত্বেও মামলা নথিভুক্তিতে গড়িমসি এবং বাদির কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন ওসি আলমগীর। এ নিয়ে গত ২ জুলাই মামলার নির্ধারিত দিনে আমলী আদালত-৪ এর বিচারক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বাদীর আইনজীবীর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির শুনানি করেন।
বাদীর আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, টাকার জন্য ওসি অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেন নি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ আদালতে উপস্থিত কোর্ট জিআরওকে নির্দেশ দেন ওসিকে মুঠোফোনে যুক্ত হতে।
জিআরও তাৎক্ষণিকভাবে ওসি আলমগীরের সঙ্গে বিচারককে মুঠোফোনে যুক্ত করান। পরে বিচারক একমাসেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না করার কারণ জানতে চান। এসময় উত্তেজিত হয়ে ওসি আলমগীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। এ নিয়ে বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও করেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে বিচারক তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে রাজশাহীর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বিচারক যা করেছেন, তা ন্যায় বিচারের স্বার্থেই করেছেন। কিন্তু বিচারকের বিরুদ্ধে জিডির ঘটনা অনাকাঙ্খিত। এর আগে কখনো এমন ঘটনা শোনা যায় নি। ওসি আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেয়া হলে আদালতের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, ওসি আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদালতের নির্দেশ এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার নেসারুল আরিফ। বিচারকের বিরুদ্ধে ওসির জিডির বিষয়টি তিনি আগে জানতেন না, পরে শুনেছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, আলমগীর হোসেন রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষকে হয়রানিতে জড়িয়ে পড়েন। তার এসব কর্মকান্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফা, প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শহিদুল ইসলাম দুখু ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপার্সন রায়হানুল ইসলামের নামে দুটি করে নাশকতার মামলা দেন ওসি আলমগীর।
এরই প্রেক্ষিতে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাংবাদিকরা। অবশেষে গত ২৭ মে তাকে আরএমপি থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়। পরে তাকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানায় বদলির প্রক্রিয়া চলছিলো। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধীতায় তা থমকে যায়।
অনেকটা গোপনেই গত জুনের প্রথম সপ্তায় পবা থানায় যোগ দেন ওসি আলমগীর। এর পরপরই তার অত্যাচারে থানা থেকে স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে যান এসআই রুহুল আমিন, মেহেদী হাসান, এএসআই উজ্জ্বল ও আমিনুল ইসলামসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে ২০১২ সালে বোয়ালিয়া মডেল থানায় ওসি থাকা কালে জমি দখল বিতর্কে জড়ান আলমগীর। ওই সময় আদালতের নির্দেশে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়।