জিহাদ চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরেই খুন হন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান

Sunday, May 25, 2014

1400953822.
স্টাফ রিপোর্টার : আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জিহাদ চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরেই খুন হন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক। ভিডিও ফাঁস হলে এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী এমপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী শিবলু গতকাল ফেনী মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এদিকে একরামুল হক হত্যাকা-ের অন্যতম পরিকল্পনাকারী আবিদুল ইসলাম আবিদসহ ৮ জনকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে আটক করেছে র্যাব। এরা হলেন, আবিদুল ইসলাম ওরফে আবিদ, জাহিদুল ইসলাম ওরফে সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন ওরফে অনিক, কাজী শানান মাহমুদ, মো. সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, মো. শাহজালাল উদ্দিন ওরফে শিপন ও হেলাল উদ্দিন।
তিন কোটি টাকার চুক্তিতে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয় বলে অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দাবি করেছেন র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান। র্যাব সদর দপ্তরে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আবিদুল ইসলাম ওরফে আবিদ জানিয়েছেন, রুটি সোহেলের নির্দেশে একরামুল হককে হত্যা করা হয়। আবিদের দাবি, ঘটনার সময় তিনি নিজে ফাঁকা গুলি ছুড়েন। আর আরিফ, সোহেল, পাঙ্খু আরিফ গুলি করেন একরাম চেয়ারম্যানকে। আবিদ হচ্ছেন সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই। তার মা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে র্যাবের হাতে আটক শাহজালাল উদ্দিন ওরফে শিপন সাংবাদিকদের বলেন, ওই দিন সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের একটি শো-ডাউনের কথা বলে তাদের ওই এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারা ৫০-৬০ জন সেখানে যান।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান দাবি করেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আবিদসহ সাতজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গত শুক্রবার রাতে আটক করে র্যাব-১-এর একটি দল। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে, র্যাব-৭-এর একটি দল গতকাল ভোরে ফেনীর রামপুর এলাকা থেকে জাহিদ হোসেনকে আটক করে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জিহাদ চৌধুরী একরামুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে ১৯ মে রাতে সালাম জিমনেশিয়ামের একটি কক্ষে জিহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরও কয়েকজনের উপস্থিতিতে একরামুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল, স্থানীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপলুসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে একরামকে হত্যা করার জন্য দুই কোটি টাকা খরচ করে একে-৪৭ রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে এমন সশস্ত্র অপরাধীদের ভাড়া করার পরিকল্পনা করা হয়। হত্যাকা-ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সশস্ত্র অপরাধী, আশপাশের এলাকার গু-াপা-া ছাড়াও সোনাগাজীর জলদস্যুদের ভাড়া করা হয়। হত্যাকা-ের আগেই অগ্রিম হিসেবে তাদের এক কোটি টাকাও দেয়া হয়। ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে তারা সবাই শহরের অ্যাকাডেমি এলাকায় অবস্থান নেন। পরে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়। হত্যাকান্ডে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হলেও আনা হয়েছিল একে-৪৭ রাইফেল।
শিবলুর আত্মসমর্পণ
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে নৃশংসভাবে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় একটি ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর গতকাল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবলু ফেনী মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেছে।
আটককৃতদের মধ্যে আবিদুল ইসলাম ওরফে আবিদ ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা বড়মনি’র ছেলে এবং ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই। একাডেমী এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কুল সুমনের অন্যতম সহযোগী। বিরিঞ্চি এলাকায় কুল ক্লাব গঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আবিদ কুল সুমনসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। কুল ক্লাবের সদস্যরা এই এলাকাসহ সমগ্র জেলায় এবং ফেনীর বাইরে বিভিন্ন সময়ে দুর্ধর্ষ কিলিং মিশন এবং নানা অপকর্মে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিরিঞ্চি এলাকার বেশকিছু লোকজন জানান।
গতকাল বিকাল ৩টায় ফেনী মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেছে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বিরিঞ্চি এলাকার ত্রাস, ফেনীর একসময়কার সন্ত্রাসের গডফাদার জয়নাল হাজারীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু। উল্লেখ্য, ফেনীর স্টেডিয়াম থেকে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এলাকা একক নিয়ন্ত্রণ করে শিবলু ক্যাডার বাহিনী। শিবলুর রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে বিরিঞ্চি এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। সন্ধ্যা না হতেই এই এলাকায় ডাকাতি, খুন, ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া বিয়ে থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি নির্মাণ কাজে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে শিবলু বাহিনী। ফেনী ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় এ অঞ্চল থেকে ভাড়াটে খুনি পাঠানো হয়। পূর্ব থেকে ধারণা করা হচ্ছিল, শিবলুর নিয়ন্ত্রণাধীন এই এলাকায় বাইরের লোক দিয়ে হত্যাকা- ঘটানোর কথা নয়। জনমনের এই ধারণা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হলো। হত্যাকা-ের সাথে সাথে শিবলু কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। একপর্যায়ে নিজে ভালো মানুষ সেজে একরামের জন্য মায়াকান্নার নাটকে লিপ্ত হয়।
শিবলু একরাম নিহত হওয়ার পর ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর সাথে ফেনীর মিজান ময়দানে এবং ফুলগাজীর পাইলট হাইস্কুলে জানাযায় অংশ নেয়। এছাড়া হত্যাকা-ের দিন বিকাল ৩টার সময় আলাউদ্দিন নাসিম এবং নিজাম উদ্দিন হাজারী হেলিকপ্টারে করে ফেনী এলে তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য শিবলু ক্যাডার বাহিনীর সাথে অংশ নেয়। একপর্যায়ে সে আলাউদ্দিন নাসিম এবং নিজাম হাজারীর সাথে ফেনী পৌরসভায় গোপন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে ফেনীর এক সময়কার গডফাদার জয়নাল হাজারীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল শিবলু। তার আমলে ১২০টি হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এসব কিলিং মিশনের বেশিরভাগ ঘটনায় শিবলু জড়িত ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর নিজের অপকর্মের কারণে গ্রেফতার এড়াতে ফেনী থেকে ভারতে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। এ সময় অসহায় হয়ে পড়ে তার ক্যাডাররা। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ফেনীর বর্তমান সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর সান্নিধ্যে আসে শিবলু। নিজাম হাজারী তার আনুগত্য স্বীকার করায় শিবলুকে পুরস্কারস্বরূপ ফেনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর ঘোষণা দেন। নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে কাউন্সিলর হয় এক সময়কার দুর্ধষ ক্যাডার শিবলু। কাউন্সিলর হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে শিবলু। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের ফেনীর বিরিঞ্চিসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ অঞ্চলে শিবলুর অনুমতি ছাড়া কোনো অপকর্ম সংঘটিত হয় না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান। গতকাল প্রশাসনের কাছে তার আত্মসমর্পণের পর এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এলাকার জনগণ তার মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করায় আনন্দের চেয়েও হতবাক হয়েছে বেশি মানুষ। যে শিবলু প্রতিনিয়ত সমাজে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছিল, সে আজ নিজেই প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করল। ঘটনার মোটিভ অন্যদিকে ঘোরানোর অপচেষ্টা চলছে বলে নিহতের স্বজন এবং এলাকাবাসী জানান। শিবলুর আত্মসমর্পণে প্রশাসন নতুন কোনো নাটক সৃষ্টি না করে সঠিক কথাটি বের করে আনবে বলে নিহত একরামের পরিবার, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সুশীল সমাজের অভিমত। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মোরশেদ জানান, শিবলু পুলিশের কাছে আত্মসমপণ করেছে। এব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তা মিডিয়াকে জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


লঞ্চ মালিকদের অতি লোভে দুর্ভোগের শিকার হাতিয়ার যাত্রীরা

যুবলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা, ইয়াবাসহ প্রধান আসামি গ্রেফতার

পাতা কুড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ শিশুর মৃত্যু

হাতিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে কিছু করার নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্ত্রীর ওপর অভিমান করে প্রবাসীর আত্মহত্যা

‘খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এর হিসাব কড়া-গন্ডায় সরকারকে দিতে হবে’

হাতিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলেন ইউএনও

নোয়াখালীতে ওয়ান শুটার গানসহ ২ তরুণ গ্রেফতার

হাতিয়ায় বিদ্যুৎ ভবন উদ্বোধন করলেন স্থানীয় এমপি

হাতিয়ায় স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

হাতিয়ায় নবাগত ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়

পকেটে মিলল গুলি, শয়ন কক্ষে ওয়ান শুটারগান, গ্রেফতার ৩

আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই : মির্জা ফখরুল

এই সম্পর্কিত আরো