নোয়াখালীতে চাঞ্চল্যকর মিলন হত্যার ৩ বছর পূতি বিচার পায়নি তার আসহায় পরিবার
ইকবাল হোসেন সুমন ,নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর শামছুদ্দিন মিলন হত্যাকান্ডের তিন বছর পূর্ণ হলো আজ রোববার । ২০১১ সালে ২৭ জুলাই এদিনে পুলিশের উপস্থিতিতে এই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে একদল উশৃঙ্খল লোক। এই ঘটনায় মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি আজো। উল্টো অভিযুক্ত চার পুলিশকে চাকরিতে বহাল করা হয়েছে।
জানাযায়, নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের সহযোগীতায় ডাকাত সাজিয়ে কিশোর মিলন নামে ১৬ বছরের এক টগবগে কিশোর গণপিটুনীতে নিমর্মভাবে খুন হন। ঘটনার দিন খালাতো বোনের সাথে চর কাকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা করতে গিয়ে স্থানীয় বখাটেদের তোপের মুখে পড়েন এই মিলন, বখাটেরা মিলনকে বেদম মারধর করার পর কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ পাশ্ববর্তী টেকের বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে এসে পুলিশের গাড়ি হতে মিলনকে নামিয়ে ডাকাত সাজিয়ে স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে তুলে দেয়। পুলিশ-জনতার গণপিটুনীতে নির্মমভাবে খুন হয় অসহায় কিশোর মিলন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর ফকিরা গ্রামের সৌদি প্রবাসী পিতার ৪ ছেলের মধ্যে মিলন সবার বড়। দুঃসম্পর্কের খালাতো বোন চুমকিকে পছন্দ করত মিলন। তাই ২৭শে জুলাই ২০১১ ভোরে নিজ বাড়ির মসজিদে স্থানীয় মুরুব্বীদের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে তার বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে চর কাকড়া ইউনিয়নের বেপারী স্কুলে পড়–য়া চুমকিকে এক নজর দেখতে গিয়েছিল সে। ঘটনার কয়েকদিন পর মুঠোফোনে ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে পুলিশের উপস্থিতে নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর গণমাধ্যমে ওঠে আসে। এনিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠলে অভিযুক্ত চার পুলিশকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। স্থানীয় সাংসদ যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মিলনের মায়ের সাথে দেখা করে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে আসেন।
এদিকে ঘটনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আদালতে মিলনের মায়ের দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তকৃত যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারাও জামিনে বেরিয়ে আসে। অভিযুক্ত ওসি রফিক উল্লাহ বর্তমানে রাঙ্গামাটি সদর থানায় পুলিশ পরিদর্শক, এসআই মো. আকরাম শেখ খুলনা রেঞ্জে, কনষ্টেবল আবদুর রহিম চৌমুহনী ও হেমারঞ্জন চাকমা চাটখিল থানায় কর্মরত রয়েছেন। মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন মিলনের মা। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে চলছে পরিবারটি।
নিহত মিলনের দাদী জোহুরা বেগম: আমরা নিরাপরাধ নাতীটাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তারা। এরপর পুলিশ নাতীকে গাড়ি থেকে লোকজনের সামনে ফেলে দেয়। তারা কিল, ঘুষি, লাথি মেরে তাকে হত্যা করে। আমরা কোন বিচার পেলাম না, এমনকি চার আনার সাহায্যও পেলাম না।
স্থানীয় বাসিন্দা জানান :মিলনের মূল হত্যাকারী হলো পুলিশ। পুলিশের কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে, অথচ পুলিশের কোন বিচার হলোনা। আমরা পুলিশের বিচার চাই, আর কিছু চাই না।
নিহত মিলনের মা কহিনূর বেগম জানান :
এই পর্যন্ত আমি সরকার থেকে কোন সহযোগীতাও পাচ্ছি না, ছেলের হত্যাকারীদের কোন বিচারও পাচ্ছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নিহত মিলনের মায়ের দায়েরকৃত মামলার আইনজীবী জানান:
আলোচিত এই মামলায় দীর্ঘ তিন বছরেও তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেনি। ইতিমধ্যে মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামীরাও জামিনে বেরিয়ে এসেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ঘটনার পারিপাশ্বিকতায় যেহেতু পুলিশ জড়িত সেই কারণে মামলার তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার জানান, মিলনের মামলাটিকে স্পর্শকাতর মামলা হিসেবে গুরুত্ব সহকারে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে এবং অচিরেই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এই মামলায় যাতে কোন অপরাধী ছাড়া না পায় এবং নিরপরাধী কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা দেখা হচ্ছে।
কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা ক্ষমতাবান ক্ষমতাহীন যে-ই হোন তাদেরকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয় এমনটাই দাবি তার স্বজন ও এলাকাবসীর।