দৈনিক ইন্তেকালের সেই হলুদ সাংবাদিক অবশেষে ধরা
বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা একটি বিষয় ছিল ‘দৈনিক ইন্তেকাল’ পত্রিকার একটি আইডি কার্ড। সেই কার্ডটিতে দেখা যায় ‘আবুল মিয়া’ নামের এক মফস্বল সাংবাদিকের ছবি। সম্প্রতি তার আসল পরিচয় ও কর্মকান্ড ধরা খেল গণমাধ্যমের কাছে। আসলে তিনি সাংবাদিক নন। সেই ব্যক্তির আসল নাম ‘সাদ্দাম মাল’। দৈনিক ইন্তেকাল নামে একটি নাটকের মাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
ইউটিউবে ‘দৈনিক ইন্তেকাল’ নাটকটি মুক্তির পর থেকেই একজন কমেডিয়ান অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পায় সাদ্দাম। যদিও ওই নাটকের মাধ্যমে সংবাদপত্রশিল্প ও সাংবাদিকতাকে কটাক্ষ করার অভিযোগও ওঠে বিভিন্ন মহলে। তবে, ভালো অভিনয়ের জন্য তিনি বরিশালসহ সারাদেশের মানুষের মাঝে আলোচনায় আসেন।
নিজের অভিনয় জীবনের নানা দিক নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন এই নাটকের অভিনেতা সাদ্দাম মাল। জানিয়েছেন,
দৈনিক ইন্তেকাল নাটকের পটভূমি ও অভিনয়ের পেছনের গল্প।
ভাইরাল হওয়া দৈনিক ইন্তেকাল পত্রিকার কার্ড সম্পর্কে সাদ্দাম বলেন, ‘‘এটা আসলে আমাদের নাটকের একটা সিকোয়েন্স ছিল। এটা ভাইরাল করার কোনো প্ল্যান আমাদের ছিল না। ‘দৈনিক ইন্তেকাল’ নামের নাটকের শুটিং চলাকালে কেউ একজন এ কার্ডটির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তারপরই এটি ভাইরাল হয়।’’
নাটকের পটভূমি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, ‘মূলত কিছু লোক আছে, যারা বিভিন্নভাবে টাকা-পয়সা বা লবিং এর মাধ্যমে সাংবাদিকতার কার্ড সংগ্রহ করে অপসাংবাদিকতা করে। সেই কার্ড ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে হুমকি দিয়ে টাকা নেওয়ার ধান্ধা করে। এ রকম একটা চরিত্রকে উপস্থাপন করার জন্যই এ নাটকটির জন্ম।
হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে কেন কনটেন্ট করতে গেলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদ্দাম বলেন, ‘যাদের সাংবাদিকতার যোগ্যতা নেই তারাও যদি সাংবাদিকতার করে, তবে তা সমাজের জন্য ঝুঁকি। আমরা নাটকে সেই বিষয়টিই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেখানে আমরা দুটি চরিত্র তুলে ধরেছি। একটা হলো একজন ভালো সাংবাদিকের চরিত্র কেমন হয়, আরেকটি হলো একজন অপসাংবাদিকের চরিত্র কেমন হয়।’
সাদ্দাম বলেন, ‘আমাদের ইউটিউব চ্যানেল দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমরা সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। হলুদ সাংবাদিকতাও সমাজের জন্য ঝুঁকি। এটা মূলধারার সাংবাদিকতাকে কলুষিত করছে। প্রকৃত সাংবাদিকতাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।’
অর্থনৈতিকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে থেকেও সাদ্দাম মাল সাদামাটা জীবন কাটাতে পছন্দ করেন। সাদ্দাম মাল ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত, প্রাথমিক শিক্ষা জীবন থেকেই বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর কৌতুক বা নাটকের প্রথম পুরস্কার তার থেকে অন্য কেউ নিতে পারেনি। তিনি তার শৈশব থেকেই কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠী নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন, এবং একটি সময় কুয়াকাটা কমেডি ক্লাব নামেও একটি সংগঠনে সাথে কাজ করেন।
নিজের অভিনয় জীবন প্রসঙ্গে সাদ্দাম মাল জানান, স্থানীয় মঞ্চনাটক থেকে শুরু করে ছোট-বড় প্রায় ১০০ টির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা এ আর মন্টুর সঙ্গে মধুমালা মদন কুমার ও নকশিকাঁথার মাঠ নামে দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি কমেডি নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানা অপসংস্কৃতি তুলে ধরছেন। বাল্যবিবাহ, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক শিষ্টাচার, পারিবারিক বৈষম্য, মাদক, হলুদ সাংবাদিকতাসহ সমাজের নানা বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি।
সাদ্দাম মাল পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার কুয়াকাটার হোসেনপাড়া গ্রামে ১৯৯০ সালের ৫ মে জন্ম নেন। ১১ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দশম। তার বাবার নাম মোহাম্মদ সামসুল হক মাল। সাদ্দাম মাল ২০১৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি একটি ছেলে সন্তানের বাবা।
সাদ্দাম মাল ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতে পছন্দ করতেন, তিনি বলেন, আমার কয়েকটি পুরনো ডায়েরি রয়েছে। যেখানে আমি অসংখ্য কবিতা, নাটক এবং ছোটগল্প লিখেছি। আমি বিশ্বাস করি কোনো একদিন আমার লেখাগুলো বই আকারে আপনাদের মাঝে আসবে।
সাদ্দাম মাল জানান, তার জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কেটেছে রাজনীতির মঞ্চে। বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে আসে সাদ্দাম মাল। বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালোবেসে রাজনীতিতে এসেছিলাম। ছিলাম কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তবে এখন নানা কারণে রাজনীতি থেকে একটু দূরে আছি। লেখালেখি ও অভিনয়ের টানেই রাজনীতিতে এখন সময় দেওয়া হয় না।’
সাদ্দাম মাল বলেন, ‘আমি এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে যে জায়গা করে নিতে পেরেছি, তা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি বাংলাদেশের কমেডি মিডিয়াকে একটি সুস্থ ধারায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমি সারাজীবন মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে বাচঁতে চাই।’