জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল সভায় ২৬ ‘প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত’ নেয়া হয়েছে
ঢাকা : কাউন্সিলের একদিন আগে হঠাৎ আদালতের আদেশে আটকে গেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কাউন্সিল। কিন্তু হঠাৎ করেও সারা দেশে থেকে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে আকস্মিকভাবে কাউন্সিল সভা করেছে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনটি।
কোনো হাঁকডাক ছাড়াই হঠাৎ করে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। গিয়াস উদ্দিন মানিকের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে কাউন্সিল সভার শুরু হয়।
কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রাজ (ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি)-এর প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে ১৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর খন্দকার এনামুল হক এনামের (ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সভাপতি) সভাপতিত্বে কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে খন্দকার এনামুল হক উপস্থিত কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ জানিয়ে সভা পরিচালনার জন্য কাউন্সিলর রেজাউল করিম টুটুলকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এনাম স্বাক্ষরিত বার্তায় জানানো হয়, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিন্ম লিখিত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হল:
১. কাউন্সিল সভার শুরুতে গিয়াস উদ্দিন মানিক পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন।
২. এই কাউন্সিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
৩. শোক প্রস্তাব: প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক কাজী আসাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুল হক বাবলু ও নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুসহ বিগত কাউন্সিলের পর থেকে বর্তমান কাউন্সিল অধিবেশন হওয়ার দিন পর্যন্ত দলের যে সব নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন-তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে এই কাউন্সিল সভা।
৪. এই কাউন্সিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাকে কারারুদ্ধ করার নিন্দা করে এবং মিথ্যা সাজানো মামলায় বিচারের নামে তার প্রতি যে অবিচার চালানো হচ্ছে তার তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে।
৫. এই কাউন্সিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্য যেসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, বিচারের নামে তার প্রতি যে শাসকদলের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা করছে এবং সকল মামলা তুলে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।
৬. এই কাউন্সিল বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্য, বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেছে।
৭. এই কাউন্সিল সকল রাজবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি, মিথ্যা মামলায় যেসব রাজনৈতিক নেতাদের সাজা দেয়া হয়েছে- সেই সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সাজা বাতিল করার দাবি জানায়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সহ সকল ধরনের নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করারও দাবি করা হয়।
৮. এই কাউন্সিল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সারা দেশে অবৈধ সরকার সম্পূর্ণ প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম মুছে ফেলছে। যার তীব্র নিন্দা করে এই কাউন্সিল অবৈধ সরকারকে সকল ধরনের প্রতিহিংসার পথ থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছে।
৯. এই কাউন্সিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে উৎকীর্ণ ফলকসমূহ শাষক দলের ক্যাডারদের ভেঙে ফেলার ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করছে। অবিলম্বে সকল প্রতিষ্ঠানের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত নামফলকগুলো আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে এবং এসব দুস্কর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।
১০. কাউন্সিলে ছাত্রদলের বৃহত্তর স্বার্থে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের অনুরোধ ও পরামর্শে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করার জন্য ছাত্রদলের অভিভাবক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
১১. এই কাউন্সিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেয়া সকল সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের প্রতি আস্থা স্থাপন করে।
১২. উপস্থিত কাউন্সিলরগণ বিএনপির চেয়ারপারসন কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অনুরূপ দায়িত্ব পালনরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেন এবং এ প্রস্তাবে উপস্থিত সকল কাউন্সিলর দ্ব্যর্থহীনভাবে সেটি সমর্থন করেন।
১৩. কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলরগণ সর্বসম্মতিক্রমে ছাত্রদলের গঠন ও পুনর্গঠনসহ ছাত্রদলকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ছাত্রদলের অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের সংশোধন, কাউন্সিল আহবান, কাউন্সিল মূলতবী করা, ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্ধারণে নির্বাচন পরিচালনা করাসহ যেকোনও সাংগঠনিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব প্রদান করে।
১৪. এই কাউন্সিল গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে নির্বাচনের নামে ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করার মাধ্যমে যে প্রহসন হয়েছে, সেই মধ্যরাতের প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে পুণরায় নির্বাচনের আয়োজনের জন্য একটি নির্দলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের বিরোধী দলীয় দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
১৫. এই কাউন্সিল শিক্ষাখাতসহ সকল খাতে যে মেগা দুর্নীতি হয়েছে- এ ব্যপারে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে- বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি তদন্তের আয়োজন জরুরি বলে মনে করছে এবং লুটেরাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানাচ্ছে।
১৬. এই কাউন্সিল দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা জায়গায় শাসকদলীয় ছাত্র সংগঠনের বেপরোয়া চাঁদাবাজী, নৈতিকতাহীন কাণ্ডগুলোর তীব্র নিন্দা করছে।
১৭. এই কাউন্সিল অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাধ, নিরপেক্ষভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি করছে।
১৮. এই কাউন্সিল সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল দল মতের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করার অধিকার করাসহ ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে সহাবস্থান নিশ্চিত করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। বহিরাগতদের হল/হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করা এবং নিয়মিত ছাত্রদেরকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানাচ্ছে।
১৯. এই কাউন্সিল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের শাসক দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে জোরপূর্বক অংশগ্রহণের নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গেস্টরুমগুলোকে টর্চার সেন্টার বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর ক্যাডার বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতনসহ সরকারি বাহিনীর অত্যাচার বন্ধ করার দাবি জানায়।
২০. এই কাউন্সিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে শিক্ষার নামে বাণিজ্যকরণ বন্ধ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি, টিউশন ফিসহ নানা খাতের চার্জ কমানোসহ ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যাবলী জরুরিভাবে সমাধান করার জোর দাবি জানায়।
২১. এই কাউন্সিল ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত হেরিটেজ হিসেবে মর্যাদা লাভকারী সুন্দরবনের পরিবেশ, জীবন-বৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে এর আশেপাশে ক্ষতিকর শিল্পকারখানা বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা করছে।
২২. এই কাউন্সিল দেশের শিক্ষানীতিতে উৎপাদনমূখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারসহ শিক্ষার উপকরণের মূল্য কমানোর দাবি করছে।
২৩. এই কাউন্সিল কৃষক ও কৃষিকে বাঁচানোর স্বার্থে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল কেনার ব্যপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবি করছে। রাষ্ট্রয়াত্ব সকল বন্ধ কল কারখানা অবিলম্বে চালু করে শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করা আহবান জানাচ্ছে।
২৪. এই কাউন্সিল ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলীসহ সরকারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে গুমের শিকার শত শত বিরোধী মতাবলম্বীদের অবিলম্বে তাদের স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছে।
২৫.এই কাউন্সিল জাতিসংঘ ঘোষিত সার্বজনিন মানবাধিকার নীতি লঙ্ঘনের জন্য বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে দায়ী করে অনতিবিলম্বে সংবিধান স্বীকৃত মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছে।
২৬. এই কাউন্সিল সংবিধানে উল্লেখিত সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় যে অঙ্গীকার ব্যস্ত হয়েছিল তা নস্যাত করার জন্য বর্তমান স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারকে দায়ী করে। রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নের সংগ্রামে ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণকে জরুরি বলে মনে করে।