ব্রাজিলের বিপর্যয়ের রেকর্ড
ক্রীড়া ডেস্ক| আশা ছিল শেষটা ভাল করার। শুরুটা ভাল হলেও তা মনে থাকে না। শেষটাই মনে থাকে বেশি। কথায় আছে, শেষ ভাল যার সব ভাল তার। ব্রাজিল ফুটবল দলের সামনে সুযোগ ছিল শেষটা ভাল করার। কিন্তু বিধি বাম। থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। আত্মঘাতী গোলে ঘরের মাঠে শুরু হয়েছিল ব্রাজিলের বিশ্বকাপ। শেষ খেলার শেষ মিনিটেও গোল হজমেই ঘরে ফিরতে হলো তাদের। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হলো দুঃস্বপ্নে। সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের লজ্জাটা কোনভাবেই কমাতে পারেনি ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। নেইমার আঘাত নিয়েই মাঠে এসেছিলেন সতীর্থদের উৎসাহ দিতে। সারাক্ষণ দাঁত কামড়ে বসে ছিলেন সাইডলাইনে। থিয়াগো সিলভা ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই সিলভাই দলের জন্য প্রথম গোল ডেকে আনেন। সবার প্রত্যাশা ছিল ব্রাজিল অন্তত ঘুরে দাঁড়াবে। প্রমাণ করবে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের হারটা দুঃস্বপ্নই ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। ব্যর্থতার রেকর্ডকে আরও ভারি করে ইতি টেনেছে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত স্বপ্নের বিশ্বকাপের। তৃতীয় হতেও পারলো না তারা। নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিল। দুই খেলাতেই ১০ গোল। আগের পাঁচ খেলায় ৪ গোল হজম। সব মিলিয়ে ১৪ গোল। ২০ বারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার রেকর্ডটা হলো নিজেদের মাঠেই। লজ্জার ষোলকলা পূর্ণ হওয়া আর কাকে বলে। ব্যর্থতার রেকর্ডটা সমৃদ্ধ করতেই যেন ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন! নিজেদের দেশে ব্রাজিল গত ৭৪ বছরে কখনও টানা দুই খেলায় হারেনি। এবার তাও দেখলো সবাই। ১৯৩৮ সালের পর এবার ব্রাজিল সর্বাধিক ১৪ গোল হজম করেছে। শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলায় স্কলারি নিয়মিতদের বসিয়ে নতুন ছয়জন খেলোয়াড়কে মাঠে নামান। মারসেলো, দান্তে, ফার্নান্দিনহো, হাল্ক, বার্নার্ড ও ফ্রেডকে প্রথম একাদশে নামাননি। বদলি হিসেবে হাল্ককে শেষ দিকে নামিয়েছিলেন। ফল যদিও ভাল হয়নি। মাঠে উপস্থিত হাজারো সমর্থককে ফের চোখের পানিতে ভাসতে হয়েছে।
ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা ডাচদের বিরুদ্ধে বেশ ভাল খেলেছে। বিশেষ করে তাদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ডাচদের চেয়ে ভাল ছিল এবং উপভোগ্য ছিল। অস্কার, রামিরেস, উইলিয়ান, পাওলিনহো ভাল খেলেছেন। বল কাটানো এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানার ছাপ পাওয়া গেছে। কিন্তু গোল করার মতো খেলোয়াড়ের বড় অভাব দেখা গেছে কাল। রক্ষণভাগের দুর্বলতা এদিনও ফুটে ওঠে প্রকটভাবে। দ্বিতীয় গোলটি তারা খেয়েছে স্রেফ নিজেদের ব্যর্থতার জন্য। এরপর ব্রাজিল অনেক চড়াও হয়ে খেললেও আর খেলায় ফিরতে পারেনি। নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্স এমনিতেও খারাপ নয়, তার ওপর ভ্লার এ খেলায় চমৎকার খেলে ব্রাজিলিয়ানদের হাত থেকে দলকে কয়েকবার বাঁচিয়েছেন। আর দুর্ভাগ্যই বলতে হবে অন্তত দু’বার টোকা দেয়ার মতো দূরত্ব থেকে পা ছোঁয়াতে পারেনি ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা।
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলার ফল অন্যরকমও হতে পারতো যদি রেফারিং ভাল হতো। আলজেরিয়ান রেফারি এদিন অনেক ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যা সাদা চোখেও ধরা পড়েছে। যে পেনাল্টি দিয়েছেন সেটা না দিলেও পারতেন আবার প্রাপ্য পেনাল্টিও দেননি।
কেন ব্রাজিলের এই অবস্থা? এক কথায় এর উত্তর মিলবে না। এটা অনেক দিনের ধারাবাহিকতার ফল। উপরে উঠলে তাকে নিচে নামতেই হবে। উত্থান পতন জীবনেরই অংশ। হতাশার কিছু নেই। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই সামনে এগিয়ে নেবে দলকে। তবুও চতুর্থ হওয়া ম্যাচে হারের দায়টাও নিজ কাঁধেই নিয়েছেন ফুটবলাররা। তারা ক্ষমাও চেয়েছেন। হারের পর খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এবারের বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনগুলোতে চলার পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে।
খেলোয়াড়রা যে মানসিকভাবে ঠিক নেই তার প্রমাণ তো সেমিফাইনালের আগেই পাওয়া যায়। যেজন্য মনোবিদের শরণাপন্নও হন কোচ। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়াটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নেইমারের ইনজুরি আর থিয়াগোর হলুদ কার্ড তাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। ব্রাজিলের আক্রমণভাগে স্কলারি যাদের উপর ভরসা করেছে সেই ফ্রেড-হাল্করা সুবিধা করতে পারেনি। মাঝ মাঠে এক অস্কার ছাড়া কারও পারফরমেন্সে সন্তোষজনক ছিল না। আর ডিফেন্সতো ছিল যাচ্ছেতাই।