অপহরণ ও মুক্তি- দুটোই রহস্যময়!
শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির(বেলা) প্রধান নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী হামিদ ফ্যাশনস গার্মেন্টস কারখানার পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিককে অপহরণের ঘটনা যেমন নাটকীয়, মুক্তির ঘটনাও তেমন নাটকীয়। প্রকাশ্যে অপহরণের পর নির্ভয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অপহৃতকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়ার পর মাংস দিয়ে ভাত খাইয়ে, ভাই-মামা সম্বোধন করে, আবার নিরুদ্বিগ্নে গাড়ি চালিয়ে রাজধানীতে এসে বিনা মুক্তিপণে ফিরিয়ে দিয়ে, নিরাপদে অপহরণকারীদের অন্তর্ধান হওয়ার ঘটনায় দেখা দিয়েছে অজস্্র প্রশ্ন। কারা কি উদ্দেশে অপহরণ করে মুক্তির ব্যাপারে দরকষাকষি ব্যতিরেকেই ছেড়ে দিল অপহরণের ঘটনা রহস্যে ঘেরা গোয়েন্দা কাহিনীকেও হার মানাচ্ছে।
অপহরনকারীরা যে সংঘবদ্ধ, দক্ষ ও ক্ষমতাধর-তা অপহরণকাল ও অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে অপহৃতকে রাখা এবং অপহৃতকে ফিরিয়ে দিয়ে অপহরণকারীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার ঘটনা এটা প্রমাণ দেয়। অপহরণের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় ও অপহৃত সিদ্দিকের ফিরে আসার পর সংবাদ মাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে ধারণা দেয় যে, অপহরণকারীরা ইতোপূর্বে আরও অপহরণ করেছে, অপহরণের পর কাউকে কাউকে মেরে ফেলেছে, কাউকে কাউকে ফিরিয়ে দিয়েছে, আবারও কাউকে না কাউকে অপহরণ করা হতে পারে। অপহরনকারীদের বয়স, অপহরণের কৌশল, অপহৃতকে রাখার নিরাপদ স্থান, ফিরিয়ে দেয়ার কায়দায় প্রকৃত অপহরণকারীদের শনাক্ত করাটা যেমন কঠিন, তেমনি সময় সাপেক্ষও বটে। বিশেষ করে আটক অবস্থা থেকে মুক্ত সিদ্দিকের দেয়া জবানবন্দীর কিছু ঘটনা ও উক্তিতে এ ধারণা দেয়।
তদন্তকারীরা যেসব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছে তার মধ্যে সিদ্দিকের দেয়া জবানবন্দীটিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। সিদ্দিক বলেছেন, তাকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে দু’দিনই হেলিকপ্টারের অন্তত ১৩/১৪ বার শব্দ শোনা গেছে। কয়েকটি ধাপে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহƒতের কাছে সন্তান ও স্ত্রীর জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। ছেড়ে দেয়ার সময় সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করছে বলে অপহরণকারীরা জানায়। তবে এসব না করতে সিদ্দিক কোন ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যেই অপহƒত সিদ্দিক, তার পরিবার, ঘটনাস্থল, সিএনজি চালক ও গাড়ি চালক রিপনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছে। অপহরণকারীরা একাধিক পক্ষ হয়ে কয়েকটি ধাপে অপহরণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। প্রথম পক্ষ অপহরণের পর অপহƒতকে দ্বিতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিতে পারে। আর ছেড়ে দেয়ার কাজ করে তৃতীয় পক্ষ। প্রতিটি পক্ষের সঙ্গে অপর পক্ষ গুলোর যোগাযোগ থাকতে পারে বলে ধরে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অপহরণের মোটিভ, অপহরণকারী, অপহরণে ব্যবহƒত গাড়ি ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ব্যবসায়িক ও স্ত্রীর পেশাগত শত্রুতার বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
সিদ্দিকের কথায় অগনিত প্রশ্ন
সিদ্দিক আদালতে দেয়া জবানবন্দী ও সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, অপহরণের প্রায় তিন ঘণ্টা পর একটি বাড়িতে আমাকে নেয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে এই তিন ঘণ্টা গাড়িটি কোথায় চলেছে? তিনি বলেছেন, আমাকে বহনকারী গাড়িটি দুটি ফেরি পার হয়। সেই দুটি ফেরি কোথায়? তিনি বলেছেন, প্রথম ফেরি পার হওয়ার পর ওরা একটি গাড়ি বদল করেছিল। এতে প্রমাণ দেয়, অপহরণকারীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত এবং অপহরণের জন্য তাদের একাধিক যানবাহন আছে। তিনি বলেছেন, একটি ঘরে দু’জন লোক আমাকে পাহারা দিত। কয়টা বাজে তাও জানাত। তাছাড়া আযানের শব্দ শুনে সময় সম্পর্কে ধারণা করতাম। যেখানে দু জনে রীতিমতো পাহারা দিত আবার কখন কয়টা বাজে তাও জানাত কোথায় সেই অজ্ঞাতস্থানটি? বুধবার রাত ১০টার দিকে ওই ঘরে এক ব্যক্তি আসেন, তাঁকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে, তার পরিচয় কি এবং কোথায়-কত বেতনে কাজ করেন তা জানতে চান বলে জানান সিদ্দিক। অপহরণকারীদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনে মনে হয় যে, অপহরণকারীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে একেক দল একেক ধরনের কাজ করেছে।
সিদ্দিক বলেছেন, আমি ওনাকে বলি-আপনাদের টাকার দরকার হলে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু ‘ভাই’ বলে পরদিন সকালে কথা হবে। ওরা আমাকে পরদিন সকালে নাস্তা করায়, দুপুরে খাওয়ায়। এসব কথায় মনে হতে পারে তাকে অপহরণ করা হয়েছে কেন? অপহরণকারীদের উদ্দেশ্য কি? সিদ্দিক জানান, পরে রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আবারও ‘ভাই’ আসে। তিনি বলেন, তোকে তো মেরে ফেললেও আমার লস, যদি ছেড়ে দেই তাও লস। মেরে ফেললে টাকা পাব না, বাঁচায়ে রাখলে টাকা পাবো। তোকে ছেড়েই দেই। অপহরণকারীদের কথাবার্তায় অনুমিত হয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এরপর তাকে গাড়িতে করে বের হয় অপহরণকারীরা। ঘণ্টাখানেক চলার পর চোখ বাঁধা অবস্থায় মিরপুরের আনসার ক্যাম্পের সামনে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পেছনে তাকাতে নিষেধ করে, সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যেতে বলে। অপহৃত ব্যক্তিকে ঘণ্টাকাল ধরে গাড়িতে করে এনে খোদ রাজধানীতে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা এবং ছেড়ে দেয়ার সময়ে তাকে আবার বাড়িতে ফেরার জন্য সিএনজি ভাড়া বাবদ তিন শ’ টাকা দেয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা কাহিনীর মতোই মনে হয়।
যে কারণে ছেড়ে দেয়া হতে পারে
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ডিবির সাবেক ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম অভিমত ব্যক্তি করেছেন যে,
সিদ্দিক অপহরণের পর থেকে ঘটনাটি মনিটরিং করে দেখতে পেয়েছি, প্রথম মিডিয়ায় ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে, দ্বিতীয়ত, মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারের কারনে রাজনৈতিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবিসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তৃতীয়ত, এ কারণে সরকারী প্রশাসনের টনক নড়েছে, চতুর্থ, পুলিশ র্যাব ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট ব্যাপক তৎপরতা হয়েছেন, পঞ্চম এতসব তৎপরতার মুখে অপহরণকারীরা অপহৃতকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অপহরণের ঘটনার পর এ ধরনের ব্যাপক প্রতিবাদমুখর তৎপরতা হলে অপহৃতরা উদ্ধার হবে এবং অপহরণের ঘটনাও হ্রাস পাবে।
যা বলা হয় ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে
সিদ্দিককে সুস্থভাবে উদ্ধার করতে পারার পর এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ হিসেবে কারা এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত, অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র ও মাইক্রোবাস উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আবু বকর সিদ্দিককে উদ্ধারের পর তিনি আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তার সূত্র ধরে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সরকারের আন্তরিকতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ চেষ্টায় অপহরণকারী চক্র চাপে পড়ে তাকে ফেরত দিয়েছে। আবু বকর সিদ্দিকসহ ওই পরিবারের সকলের নিরাপত্তায় যা যা করা দরকার, আমরা সবই করব। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তাকে উদ্ধারে গঠিত তদন্ত কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনায় যত ধরনের ক্লু পাওয়া যাচ্ছে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ঘটনা সম্পর্কে যত তথ্য পাওয়া যাবে, তা তদন্ত করে দেখা হবে। যারা এই অপহরণ করেছে, কী কারণে করছে, সেসব খুঁজে বের করাই উদ্দেশ্য।
এটি একটি সুপরিকল্পিত অপহরণের ঘটনা। একটি উদ্দেশ্য নিয়ে অত্যন্ত নিপুণভাবে এ কাজ করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপি মুখপাত্র।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার হামিদ ফ্যাশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বুধবার ঢাকায় ফেরার পথে অপহৃত হন। ঘটনার ৩৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর আনসার ক্যাম্পের কাছে চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। পরে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ধানম-ির সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ফেরার পথে কলাবাগানে চেকপোস্টে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যায়। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের তালিকা খতিয়ে দেখছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে আদালতে আবু বকর জবানবন্দী দিয়েছেন, তা ধরে তদন্ত কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি মুখপাত্র।
সেই বাড়িটি কি টর্চার সেল
যেই বাড়িটিতে সিদ্দিককে আটক রাখা হয়েছে তাকে পাহারা দেয়া অপহরণকারীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বাড়িটি কার ? কারা এখানে আসে? এখানে থাকে কারা। উত্তরে অপহরণকারীদের একজন বলেছিলেন, এখানে আপনার মতোই অনেককে নিয়ে আসা হয়। কাউকে মেরে ফেলা হয়। আবার কাউকে আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয়। সেই বাড়িটিতে আছে কয়েকটি কামরা। একটিতে খাট ও কার্পেট আছে। এটি কোন পারিবারিক বাসা নয় বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক। এই বাড়িটি কি তাহলে কোন টর্চার সেল?
গাজীপুরের কালিগঞ্জের দিকে
অপহৃত অবস্থা থেকে উদ্ধারের পর সিদ্দিক সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, অপহরণের পর তাকে যে স্থানটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েচে, সেখানে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছিল। এলাকাটি কিছুটা উঁচু-নিচু মনে হয়েছিল তার। তার মনে হয়েছে ফেরি পার হয়েছে দু’বার । উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে গেছে গাড়িটি। গাজীপুর বা কালীগঞ্জের কোন স্থান হতে পারে বলে তার মনে হয়েছে। অপহরণকারীরা দুই দফা গাড়ি বদল করেছে। আমাকে হাত-পা-চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসের সিটে ফেলে রাখা হয়েছে তাকে। গাড়িটি কোথাও টোল দিয়েছে বলে তা মনে হয়নি তার। তদন্তকারীরা সিদ্দিকের এসব বক্তব্য সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে।
অপহরণকারীরা কেমন?
অপহরণকারী চক্রের বয়স, কথাবার্তা, চালচলন সব কিছুতেই মনে হচ্ছে তারা খুবই দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। অপহরণকারীদের বেশিরভাগের বয়স ৩৫-৩৬ হবে। সবাই বেশ সুঠামদেহী। সবার উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো হতে পারে। একজন দলনেতা ছিল। তারা রাতে গরুর মাংস ও দিনে মুরগি দিয়ে ভাত দিয়েছে। সকালে খেতে দিয়েছে পাউরুটি-কলা। অপহরণকারীরা তাকে মামা বলে সম্বোধন করেছে। ভাল ব্যবহার করেছে তারা। মেঝেতে ঘুমাতে দিয়েছে। একজনে তার কাছে জানতে চেয়েছে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে মনে হয় কারও জমিজমা নিয়ে ঝামেলা আছে। অপহরণকারীরা তার জন্য ওষুধ দিয়েছে। প্রথমে আমাকে তাকে যে কক্ষে নিয়ে রাখা হয় সেখানে টেলিভিশন ছিল। টিভির খবরে রিজওয়ানার কণ্ঠ শুনতে পায় সিদ্দিক। চোখ বন্ধ থাকায় কন্ঠ শুনলেও ছবি দেখতে পায়নি। পরক্ষণেই টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করে দেয়া হয়। তাকে অপহরণকারীদের একজন এসে বলেছে, গোটা এলাকা পুলিশ ও র্যাব তল্লাশি চালাচ্ছে। খুঁজতে খুঁজতে এখানেও চলে আসতে পারে। অপহরণকারীরা গাড়ি থামিয়ে চোখ থেকে কাপড় খুলে দেয়ার সময় তাঁকে বলেছে, পেছনের দিকে তাকাবি না। সোজা হেঁটে সামনে যাবি। তারপর অপহরণকারীরা অদৃশ্য হয়ে যায়।
যা বলেছেন রিজওয়ানা হাসান
বাংলাদেশ পরিবেশে আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শনিবার বিকেলে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় তাঁর স্বামীর অপহরণের ঘটনার ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সুপরিকল্পিতভাবে ওকে আবু বকরকে অপহরণ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতরা অত্যন্ত পরিপক্ষ। যে কথা আমি আগেও বার বার বলে এসেছি, এখনও তাই বলছি। আমার আইনগত কাজে যারা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তারা আমার স্বামীর অপহরণ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। আবার অন্যরাও জড়িত থাকতে পারে। এটা দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অন্য কোন ধারণা নেই আমার। রিজওয়ানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, লোকজন নাকি বলেন, আমার বাবা রাজাকার ছিলেন। আমি বলি আমার বাবা মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন। এটা নিয়েও সমালোচনা করে বিষয়টি অন্য দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাবার রাজাকার না মুসলিম লীগের সদস্য তার সঙ্গে আমার স্বামীর অপহরণের ঘটনার কি সম্পর্ক কি তা আমি বুঝে পায়নি। আবার অনেকে বলে, চাঁদাবাজির জন্য আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা আমার মনে হয় না। ওকে ধরে নেয়ার পর কেউ আমার কাছে কিংবা ওর কাছেও চাঁদা দাবি করেনি। আবার আমি মনে করি না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ এ ঘটনায় জড়িত। আমি প্রথম থেকেই নিজের মনে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছে। নারায়ণগঞ্জের টর্চারসেল নিয়েও আমার তথ্য ভুলভাবে মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে। আমার স্বামীকেও অপহরণ করে ওই ধরনের টর্চারসেলে নেয়া হতে পারে বলে ধারণা পোষণ করি। এখন ঘটনার রহস্য বের হবে বলে আশা করেন সৈয়দা রিজাওয়ানা হাসান।
স্টাফ রিপোর্টার রুমন রেজা নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর মুক্তি পাওয়া ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নিবার্হী এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণকারীরা এখনও শনাক্ত হয়নি। অপহরণ কাজে ব্যবহৃত নীল রঙের সেই হাইয়েস গাড়িটিরও হদিস পায়নি পুলিশ। তবে মুক্তি পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আমলে নিয়ে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, অপহৃত উদ্ধার হলেও মামলার তদন্ত কাজ চলবে।
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকন্ঠ