আয়েশা ফেরদাউস সংসদে – ওয়ালী আজিম কি পেলেন ?

Friday, January 31, 2014

Aiesa aliফজলে এলাহী শাহীন

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনা হচ্ছে। আগামীতেও হবে। প্রতিনিয়ত নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে অনেক বক্তব্যও উপস্থাপিত হচ্ছে দেশে এবং বিদেশে। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারা জানেন যে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনতঃ ও সাংবিধানিক ভাবে পুরোপুরি বৈধ। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমারও একই অভিমত। তবে একথা বলা যায়, ভারতের আম আদমির গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছুটা সংশয় আছে। কেননা একটি বড় বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অন্যদিকে অর্ধেক সংখ্যক প্রার্থী (১৫৩ জন) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। তাই সমালোচনার মাত্রাটা একটু বেশী। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এবারের সংসদ নির্বাচন তেমন উত্তাপ ছড়াতে না পারলেও সাগরকন্যা হাতিয়ার সংসদ নির্বাচন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এবারের নির্বাচনে হাতিয়ার অনেক অনৈতিক ঐক্য করেও নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করতে তো পারেনি, বরং নৌকা ও মোহাম্মদ আলীর জন জোয়ারে তথাকথিত স্বতন্ত্র প্রার্থী (যা পক্ষান্তরে তথাকথিত আওয়ামী, জামাত, বি.এন.পি’র জোট) সুনামীর মত উড়ে গেল।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৬ হাতিয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে গৃহবধূ আয়েশা ফেরদাউসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম। যেহেতু প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে নেই, সেহেতু আওয়ামী প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীর লড়াই-এ হাতিয়ার উত্তর দক্ষিণ ও বয়ারচর অঞ্চল জমজমাট হয়ে উঠে। সাধারণত কোন রাজনৈতিক দল থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হলে সকল সÍরের নেতা-কর্মীগণ দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। হাতিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি হলো? হাতিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন তো দেয় নি, বরঞ্চ লীগ প্রার্থীর বিরোধীতায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে আদা জল খেয়ে নির্বাচনে নামেন। বাংলাদেশের এরূপ একটি সন্ধিক্ষণে মুক্তিযুদ্ধেও সকল পক্ষের শক্তি যেখানে এক কাতারে একত্রিত হয়ে ঐক্যের প্রতীকে কাজ করছে, সেখানে হাতিয়ার আওয়ামী উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় ও জনাকয়েক চেয়ারম্যান নৌকার চরম বিরোধীতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য আরেকজন প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কাজ করেন, তিনি হলেন হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ ফজলুল আজিম। অবশ্য ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করাটা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের এই গৃহবধূ প্রার্থীর উপর ওনার রাগ ক্ষোভ, কষ্ট সেই ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই। সেই নির্বাচনে ফজলুল আজিম আয়েশা ফেরদাউসের নিকট ২২হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সাড়ে ৪ হাজার ভোটে আয়েশাকে পরাজিত করার রেজাল্ট সৃষ্টি করে আয়েশার বিজয় ছিনিয়ে নেয় , অর্থাৎ পরীক্ষার হলে টেবিলের উপর পিস্তল রেখে নকল করে পাস করার মত। নিরূপায় আয়েশা পরবর্তিতে আইনের আশ্রয় নিলে নির্বাচনী ট্রাইবুনালও আজিমের এই বিজয়কে অবৈধ ঘোষনা করে দেয়। হাতিয়ার রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের গণমানুষের রায় একরকম আর ফলাফল তার উল্টো। এদিক থেকে ফজলুল আজিম আয়েশা ফেরদাউসের বিরোধীতায় রাম শাম যে কাহারো নির্বাচন করবে। এছাড়া ওয়ালী-মহি উদ্দিনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি অংশ এবং ফজলুল আজিম ও তার সমর্থকদের বিশাল অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরের পক্ষে কাজ করে।
অধ্যাপক মোঃ ওয়ালী উল্যাহ , তাঁর আত্মীয়রা ও প্রকৌশলী ফজলুল আজিম ও তার সতীর্থরা হাতিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আনতে পারাতো দূরের কথা, কাছাকাছিও আনতে পারেনি। নৌকা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর জোয়ারে ওয়ালী উল্যাহ ও ফজলুল আজিমের প্রার্থী হাতিয়ায় খড়কুড়োর মত উড়ে গেল। হাতিয়ার সত্যিকারের আওয়ামী ও বঙ্গবন্ধু প্রেমীদের এবং সাধারণ মানুষের ভোটে বিজয়ী পতাকা উড়িয়ে আয়েশা ফেরদাউস এলেন মহান সংসদে। প্রথম বারের মত হাতিয়া থেকে মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে হাতিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে নূতন মাত্রা যোগ করলেন।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, মোঃ ওয়ালী উল্যাহ ও ফজলুল আজিমেরা মনে করেন, হাতিয়ার জনগণ তাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে যে কোন ব্যক্তি বা মার্কার পিছনে ছুটবে। নিরবচ্ছিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হলেও হাতিয়ার জনসাধারণের মাঝে স্বাতন্দ্রবোধ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নাগরিক সচেতনতা। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিগত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমন আওয়ামী সমর্থিত স্বতন্ত্র আয়েশা ফেরদাউসকে হারানো অসম্ভব ছিল, তেমনি দশম সংসদ নির্বাচনেও অশুভ আঁতাত করে আয়েশাকে ঠেকানো গেল না। এতে করে হাতিয়ার সাবেক দুই সংসদ সদস্য ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতারা কি শিক্ষা পেল? তারা কি শিক্ষা পেল জানিনা। তবে একটি রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠে এবং একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি হিসাবে যা বুঝতে পেরেছি, তা হলো –
ক) নৌকা মার্কা নিছক কোন নির্বাচনী প্রতীক না। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এবং আজকের বাংলাদেশ। নৌকা প্রতীক জাতীয় নির্বাচনের মূল প্রতীক। প্রতীকটি বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
খ) স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ বিরোধী জনগোষ্ঠীরা দেরীতে হলেও আজ একই ফ্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। যার নেতৃত্বে দিচ্ছেন স্বাধীনতার স্থপতির কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
গ) ১৯৮৬ সালে তৎকালীন হাতিয়ার সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে আগমন ঘটে মোহাম্মদ আলীর। ওনার তৎকালীন আগমন ও সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত হলেও ১৯৯০ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থান উত্তর হাতিয়ার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে মোহাম্মদ আলী জননেতায় পরিণত হয়। বর্তমানে তিনি হাতিয়ার রাজনীতির অন্যতম নীতি নির্ধারকও।
ঘ) হাতিয়ার সাবেক চার আওয়ামী লীগ নেতা (মরহুম দেলোয়ার হোসেন এডভোকেট, মরহুম মাহফুজুল হক এডভোকেট, মৌঃ শফি উল্যাহ ও মরহুম কামাল উদ্দিন প্রিন্স) ও তাদের পরিবার মূল ধারার আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে কাজ করছে। কোন পরিবার কিংবা ব্যক্তি বিশেষের পক্ষে কাজ না করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই কাজ করে যাচ্ছে।
ঙ) আজকের বাংলাদেশে যেখানে জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বনাম বি.এন.পি-জামাত। সেখানে হাতিয়ায় জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে জামাত বি.এন.পি’র ঐক্য।
চ) নোয়াখালী যে জেলা নেতার নিজের এলাকায় শক্ত ভীত নেই সে নেতা হাতিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ? যার ফলাফল হাতিয়ায় দশম নির্বাচনের ফল।
ছ) অধ্যাপক মোঃ ওয়ালী উল্যাহ ও প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল আজিমের হাতিয়ার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে যে শক্ত ও সৃদৃঢ় ভীত নেই, আয়েশা ফেরদাউসের বিজয় তার প্রমাণ।
হাতিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সাবেক সংসদ সদস্যরা, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন। যেন আগামী ৫ (পাঁচ) বছর হাতিয়ার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। আয়েশা হতে পারেন রাজনীতিতে নবীন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্যা।
মাননীয় সংসদ সদস্যের নিকট আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, হাতিয়ার জনগণ নানা প্রতিকূলতা ও প্রলোভনমুক্ত থেকে আপনাকে যে প্রত্যাশার প্রতিনিধিত্ব করে মহান জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে। আশা করি আপনি তাদের ভালোবাসার মূল্য দেবেন। হাতিয়ার তথা নোয়াখালী জেলার প্রথম মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যে ইতিহাস আপনি সৃষ্টি করলেন, তেমনি আপনার কর্মের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ইতিহাস রচনা করবেন। যেন আগামীতে আপনাকে নিয়ে কোন কলাম নয়, যেন একটি বই লেখা যায়।


বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, কিন্তু পশ্চিমারা চুপ: জয়

আ.লীগ প্রার্থীর সমাবেশে বন্দুক হাতে বিএনপি নেতা

নদী রক্ষা করতে না পারলে, দেশ রক্ষা করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

বুধ-বৃহস্পতি অবরোধ, রোববার মানববন্ধনের ডাক বিএনপির

রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আচারণবিধি লঙ্ঘন : নোয়াখালী-১ আসনের আ.লীগ প্রার্থীকে শোকজ

নোয়াখালীর ৬ আসনে এমপি কিরনসহ ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল গভীর নিম্নচাপ, নাম ‘মিগজাউম’

এলপিজি গ্যাসের দাম ২৩ টাকা বাড়ল

নির্বাচনের আগে সারা দেশে ওসি-ইউএনও বদলির নির্দেশ

হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল

অনিয়ম-দুর্নীতি-ই হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ

নোয়াখালী-৪ ও নোয়াখালী-৩ এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল 

নোয়াখালীতে যাত্রীবাহী বাসে হামলা, আহত-৫ 

নোয়াখালীর ৬ আসনে ৫৫ মনোনয়নপত্র জমা

এই সম্পর্কিত আরো