হাতিয়ার প্রথম নারী এম.পি ॥ সংসদে ক্ষমতাসীনের আসনে হাতিয়াবাসীর প্রত্যাশা অনেক
সদ্য সমাপ্ত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে হাতিয়ার ইতিহাসে আয়েশা ফেরদাউসই প্রথম ব্যক্তি যিনি নারী হিসেবে প্রথম নির্বাচিত এম.পি এবং ক্ষমতাসীন দলের হয়ে এই প্রথম হাতিয়ার জনপ্রতিনিধি হিসাবে সংসদে অংশগ্রহণকারী এম.পি।
নারী ক্ষমতায়নের এই বিশ্বে হাতিয়াবাসীর জন্য এটি একটি বড় সুখবর। সংসদে অবহেলার পাত্র হিসেবে চিিহ্নত নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের উপর থেকে এবার অবহেলার চাদর সরিয়ে দিয়েছে আয়েশা ফেরদাউস। নবনির্বাচিত ঐতিহাসিক এই নেত্রীর সামনে এখন পুরাতনের রেখে যাওয়া জঞ্জাল কাটিয়ে ওঠার কঠিন চ্যালেঞ্জ আর অবহেলিত হাতিয়াবাসীর ভাগ্যোন্নয়নের গুরু দায়িত্ব। গন্তব্যে পৌছে নিজের অবস্থান অক্ষুন্ন রাখতে হলে সাবধানে পথ চলা দরকার। সেজন্য তারই নির্বাচনী এলাকার একজন ক্ষুদ্র মানুষ হয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
হাতিয়ার প্রধান সড়কের বেহাল চিত্র, নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষের জীবনের গতি পরিবর্তন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ খাতে চরম ভোগান্তি ও নৈরাজ্য, ভূমি দালালদের জবরদখল, দস্যু দৌরাত্য, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও যথেচ্চাছার, সরকারী তহবিল লুটের উলঙ্গ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি সংকটগুলো এতদিন যেন হাতিয়াবাসীকে অট্টহাসি দিয়ে বলেছিল তোমাদের কোন অভিভাবক নাই। তোমরা এতিম অনাথ অবহেলিত এক জনপদের বাসিন্দা।
বিগত সময়ে হাতিয়ার প্রধান সড়কের সংস্কার কর্মে অবহেলার সঠিক তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে অভ্যন্তরীন এই সড়কটির অতিসত্ত্বর সংস্কার ও উন্নয়ন করা না হলে এই মরণ ফাঁদে কখন কার জীবনাবসান ঘটে, কার পরিবারে শোকের মাতম শুরু হয় বলা যায়না। তমরদ্দি কেন্দ্রীক নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে আজ নদী ভাঙ্গন রোধের এই চেষ্টাটিও অনেকটা বিফলে যাচ্ছে। অতিদ্রুত হস্তক্ষেপ করে প্রকল্পটি রক্ষায় ভূমিকা রাখা দরকার। হাতিয়াবাসীকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর করে রাখার প্রয়াসে ইতোপূর্বে হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় বি¯তৃত জমি সীমানা পিলার আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে কিনা জনমনে সন্দেহ রয়েছে। এক্ষেত্রে নবনির্বাচিত এমপি যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসন গ্রহণ করেছেন, সেহেতু স্বল্প সময়ের মধ্যে এর একটা বিহিত করা দরকার। হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, ঝাড়–দার না থাকায় বিশেষ করে লাশ ময়না তদন্তের কাজে নিয়োজিত ডোম এবং গায়নী চিকিৎসক না থাকায় অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে হাতিয়াবাসী। পদাধিকার বলে মাননীয় এমপি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কমিটির সভাপতি। তাই তিনি হাসপাতালটির বর্তমান রুগ্ন অবস্থার পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে হাতিয়াবাসীর প্রত্যাশা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধেও তৎপরতা চালানো দরকার। সর্বোপরি হাতিয়ার বর্তমান নাজুক চেহারা দিন দিন বদলে দিয়ে হাতিয়াবাসীর এতদিনকার অসহায় অবস্থার পরিবর্তনে নবনির্বাচিত এই ঐতিহাসিক এম.পি’র নিকট হাতিয়াবাসীর প্রত্যাশা অনেক। নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সাথে মরণপণ যুদ্ধ করে নিরন্ন পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে যাওয়া হতভাগা গরীব জেলে যখন জলদস্যু নামক নরপশুদের দ্বারা অপহৃত, আক্রান্ত কিংবা জীবন বিপন্ন করতে হয় তখন আমাদের এ দ্বীপে শান্তি আছে বললে শয়তানও হেসে আত্মহারা হয়ে পড়ে। সুতরাং এসব দস্যুদের দৌরাত্য যেন অন্তত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হাতিয়ার চৌহুদ্দির ভিতরে চলতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বিগত সরকারগুলোতে জাতীয় সংসদের অবহেলিত আসনটির নাম ছিল নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া)। কখনো বিরোধীদলীয় আবার কখনো স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার কারণেই হাতিয়ার এ পরিণতি হয়েছিল। এতে করে জাতীয় উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য কোন ছোঁয়া লাগেনি ২১শ’ বর্গমাইলের ৬ লক্ষাধিক মানুষের প্রিয় এই আবাসভূমিতে। আপনিই প্রথম ব্যক্তি ৯০ এর পর যিনি হাতিয়ার প্রতিনিধি হয়ে সংসদে ক্ষমতাসীন দলের আসনে বসতে পেরেছেন। তাই সংসদে নিজের ও হাতিয়াবাসীর এই অনুকুল অবস্থানকে পুঁজি করে বাড়তি কিছু আদায়ের চেষ্টা করুন। আপনার প্রতি হাতিয়াবাসীর বিশ্বাস ও আস্থাকে ভরসা করে এগিয়ে চলুন। আশা করা যায় হাতিয়ার উন্নয়নে অবদান রাখতে আপনার চেষ্টা সফল হবে। হাতিয়ার স্থানীয় মিডিয়াকর্মীদের দেওয়া তথ্য ও পত্রিকার সংবাদে নজর রেখে আপনার সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে ভূমিকা রাখলে আমাদের কষ্ট স্বার্থক হবে।
লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, হাতিয়া কণ্ঠ।