প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধে অংশীজনের করণীয়
মোহাম্মদ আবদুর রব
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করনে ঝরে পড়া একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমন উপযোগী শিশুরা ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা চক্র শেষ হওয়ার পূর্বে মধ্যবর্তী যে কোন সময়ে যে কোন শ্রেণি থেকে যদি বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখা পড়া ছেড়ে দেয় তখন তাকে ঝরে পড়া বলে। ঝরে পড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক গুলো বিষয় রয়েছে। এসব বিষয় গুলোর মধ্যে অভিভাবকের অসচেতনতা.দারিদ্রতা,শিশুর যতেœর ঘাটতি,মেয়ে শিশু, বাল্য বিবাহ,শিশুশ্রম, শিশুর অসুস্থতা,ভাষার সমস্যা, বিদ্যালয় ও শ্রেণি কক্ষের পরিবেশ, দূর্বল শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাক্রমের অসঙ্গতি, বিদ্যালয়ের সময়সুচি, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি,সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা,নিস্ক্রিয় এসএমসি,শিক্ষক অভিভাবক সম্পর্ক, বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ঝরেপড়া রোধ করার জন্য স্থানীয় জনসমাজের সম্পৃক্ততা অতীব জরুরী ।বিদ্যালয়ের কর্মকান্ডে যেসব বিষয়ে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা যায় সেগুলো হলো- শিশুজরীপ, শতভাগ ভর্তি, ছাত্র ও শিক্ষকের নিয়মিত উপস্থিতি,বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপন, বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, প্যারা শিক্ষক ও বিষয় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগ, স্থানীয়ভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করণ, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা, মা সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশ করা, স্লিপ স্টেহোল্ডার সভার আয়োজন করা ইত্যাদি। ঝরে পড়ারোধে সমাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তি বর্গের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা হচ্ছে-অভিভাবকদের সচেতন করা, শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা,শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, নিয়মিত হোম ভিজিট করা, বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ স্কুল ড্রেস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনের সুযোগ বৃদ্ধি করা, বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ নিয়মিত সহপাঠ- ক্রমিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা, বিষয় বিশেষজ্ঞ প্যারা শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, মিড ডে মিল বাস্তবায়ন করা,মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি আলাদা যতœ নেয়া , বিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ সংগ্রহ করা এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করা এবং সর্বোপরি “আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়বো” এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের একজন অংশীদার হিসেবে সকল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। এক কথায় বলা যায়, ব্যক্তি সমাজ জাতি তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগত মান উন্নয়ন এবং ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রের সকল শক্তি ও সামর্থ্য কাজে লাগাতে হবে। উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা করি।
লেখকঃ
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার
সুবর্ণচর, নোয়াখালী।
মোবইলঃ ০১৭১৮-১১০৬৫৬