শারমিনের গল্প : একটি সাধারণ মেয়ের আত্মকথন (পর্ব-৪২)

Saturday, November 5, 2022

           শারমিন আকতার রানা


.
এমন কষ্টকর জীবনের কথাতো ছোট ফুফু স্বপ্নের ঘোরেও কখনো কল্পনা করেনি। প্রতিটি দিন অসহ্য যন্ত্রণা হয়েই যেন তার জীবনে ফিরে ফিরে আসে।ভাবনার গভীরে শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পায়না। এই মানুষটা সাথে করে ছোট ফুফুর মনের স্বপ্নের সব রঙই যেন নিয়ে গেছে। সালমাও ভীষণ চুপচাপ হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো সারাক্ষণ মাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে না।এই কয়দিনেই ছোট্ট শিশুটি অনেকখানি পরিপক্ব হয়ে উঠেছে।সব জিজ্ঞাসার উত্তর নিজেই খুঁজে নেয়া শিখে গেছে। ইদ্দতকালীন সময়ে হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু হাই স্কুল থেকে সংবাদ এলো নভেম্বরের সাতাশ তারিখ থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। খবরটা ছোটফুফু নিস্তেজ ভাবে শুনল। অন্য সময় হলে নিশ্চয়ই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথের এই ধাপটি নিয়ে সে ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠতো। কিন্তু আজ তার চেহারায় কোন অভিব্যক্তিই প্রকাশ পেলনা। এই অবস্থায় পড়াশোনা কিংবা পরীক্ষা দেয়ার চিন্তা তার মাথা থেকে উবে গেছে। এই সময় শোকে কাতর আরেকজন মা ছোটফুফুর প্রতি সাহসের হাত বাড়িয়ে দিলেন।এই মা আর কেউ নন,ছোট ফুফুরই শাশুড়ী। ছোট অবস্থায় এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকেই ছোট ফুফুকে মায়ের আদরে সর্বদা আগলে রাখতো তার শাশুড়ী। উনি ছোট ফুফুকে ভালো করে বোঝালেন।বললেনঃ যে চলে যায় তারতো ফেরার আর কোন পথ খোলা থাকে না।আল্লাহর তরফ থেকে যখন যার ডাক আসবে তখন তাকে ক্ষণিকের মায়ার পৃথিবী থেকে চিরতরে চলে যেতেই হবে।এর কোন অন্যথা হওয়ার জো নেই। এই সত্যটুকু মনে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তান হারা হওয়া যে কতো বেদনার সেটা প্রতিটি মা মাত্রই বুঝবে।তপু(ছোট ফুফুর নাম) বলতে পার, তোমাদের কথা ভেবেই আমি সেই বেদনাতে পাথরচাপা দিয়েছি।আমি চাই, তুমি টেস্ট পরীক্ষাটা দাও।তোমার সামনে সারাজীবন পড়ে আছে। তোমারওতো বেঁচে থাকার জন্য একটা অবলম্বনের দরকার। ছোট ফুফু উনার শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানিতে ভেসে গেল। ওর শাশুড়ী ও কান্নার সাগরে ভাসতে ভাসতে বললেন, জীবনে যেখানে যে অবস্থাতেই থাক না কেন সবসময়ই আল্লাহর দরবারে আমার ছেলেটার জন্য দোয়া চাওয়ার সময় বলবে,আল্লাহ যেন আমার ছেলেটাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তী চার মাস দশ দিন স্ত্রীকে সর্বদা পর্দার সহিত স্বামীর গৃহেই অবস্থান করতে হয়।তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ, বিশেষ অনুরোধে ছোট ফুফুর শ্বশুর বাড়িতে এসে পরীক্ষা নেয়ার বিশেষ বন্দোবস্ত করল। পড়ার জগৎ হতে বিচ্ছিন্ন ছোট ফুফু ভাবলেশহীন ভাবে কোনোমতে পরীক্ষাগুলো শেষ করল।শুধু তা নয়, ৯০ সালে মেট্রিক পরীক্ষাতেও ভালোভাবেই উৎরে গেল। পরীক্ষা শেষ হতেই মামনি ছোট ফুফু আর সালমাকে সাতকানিয়াতে নিয়ে এসেছিল। ফলাফল জানার পর ড্যাডি চট্টগ্রামে গিয়ে বনফুলের মিষ্টি কিনে নিয়ে এসেছিল।এজন্যই হয়তো বলা হয়ে থাকে, লক্ষ্য স্থীর থাকলে হাজারো ঝড় ঝঞ্ঝার মাঝেও আল্লাহর ইশারায় জয় সুনিশ্চিত হয়ে ধরা দেয়। এরপর ছোটফুফু সরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে সফল ভাবে উৎরে গেল। তবে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে না থেমে ঠিকই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিল।
সালমাকে ড্যাডি সাতকানিয়াতেই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। হাতে আঁকানো ফুফাসাহেবের একটা বড় ফটো ফ্রেমেবাঁধা ছিল। মাঝে মাঝেই দূর হতে খেয়াল করতাম ছবিটি সালমা বুকের সাথে চেপে ধরে ভাবলেশহীন ভাবে দূর অজানার দিকে চেয়ে থাকতো। সে সময় আমার নিজের বুকের মাঝে এমন মুচড়ে উঠতো যে ওর পাশে গিয়ে বসার সাহসটুকুও সঞ্চয় করতে পারতাম না। আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে সুখদুঃখ এভাবেই জড়াজড়ি করে থাকে। দুঃখের সময়গুলো সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে পারাটাই হলো মোক্ষ কথা। মামনিকে শত অসুস্থতার মাঝে ও কখনো মনোবল হারাতে দেখিনি। সবসময় হাসিমুখে বলত,আল্লাহ সবসময় তাঁর প্রিয়বান্দাকে অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেন। ড্যাডি হেসে বলতো, তোদের মা হাজারো অসুস্থতার মাঝেও মেহমান দেখলেই আনন্দে অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়।মেহমান হলো তোদের মায়ের মেডিসিন। মামনি ও হেসে উত্তর দিতো, প্রতি একজন মেহমানের সাথে সত্তর জন ফেরেশতাকে আল্লাহ অতিথি হিসাবে আমাদের ঘর আলো করার জন্য পাঠান।তখন শান্তির যে সুবাতাস প্রবাহিত হয় তাতেই শরীর জুড়িয়ে যায় বলেই অসুস্থতা টের পাইনা। মামনি বাসাকে সবসময় ভর ভরন্ত দেখতেই বেশি ভালোবাসতো। যখনকার কথা এখন বলবো সেই সময় চাচীর স্কুল বন্ধ থাকায় ছোট ফুফু, দাদুদের সবাইকে উনাদের বহদ্দারহাটের বাসায় বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় মামনি খাবার সাজানো অবস্থায় একটা প্লেট হাতে ডাইনিং টেবিলের দিকে যাওয়ার সময় মাঝপথেই স্লো-মোশনে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। আর খাবার ভর্তি প্লেটটি ঝনঝনাৎ শব্দে ফ্লোরে আঁচড়ে পড়ল।আমি একটু দূর থেকে দেখেই দৌড়ে এসে মামনিকে ধরার আগেই ভোজবাজির মতো সব ঘটে গেল। এরপর সবাই মিলে ধরাধরি করে মামনিকে বিছানায় শোয়ানো হল।আমি কোন কাজকর্ম না পারলেও ছোট বেলা থেকেই অসুস্থদের সেবা করার কাজ ভালোই রপ্ত করে ফেলেছিলাম। মামনির অসুস্থতার দিনগুলোতে আমরা একেকজন দক্ষ নার্স হয়ে উঠতাম।মামনির জ্ঞান ফেরার পর ড্যাডি বেদিশার মতো নীচতলাতে সামনাসামনি যে উঠানটি আছে সেখানে গিয়ে মামনির জন্য ডাব কাটা শুরু করল।উপর তলা থেকেই ডাব কাটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ডাবের পানি পান করলে মামনির গায়ের কাঁপুনি কিছুটা হলেও কমে যায়।এই ডাবগুলো একটু আগেই বাবুল ভাই তড়িৎ বেগে গাছে উঠে পেড়েছিল। দাদু ডালিম ভাঙতে লাগলো। দাদু মনে করতো,ডালিমের/আনারের কোয়াতে ফোঁটা ফোঁটা লাল রঙের যে রসটুকুন থাকে, তা মামনি খেলেই পেটে গিয়ে রূপান্তরিত হয়ে রক্ত হয়ে যাবে। আমি মামনির মাথা ম্যাসাজ করতে করতে ভাবছিলাম,আল্লাহ এই কষ্টটুকু মামনিকে না দিয়ে যদি আমাকে দিত বেশ হত। মামনির মতো ভালো মানুষকে কেন যে আল্লাহ অসুখ দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন তা আমার বুঝের অতীত ছিল। পুষ্পদিদি বাথরুমের কল ছেড়ে বালতি পুরাচ্ছেন মামনির মাথায় পানি ঢালবেন বলে।মনি মামনির কোল ঘেঁষে বসে দোয়া পড়ে মামনিকে ফুঁ দিচ্ছে। ওকে প্রতিদিন সকালে হুজুর বাসায় এসে পড়িয়ে যায়।তাই ইদানিং কিছু হলেই ও বড়দের মতো ভঙ্গি করে সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিতে থাকে। ওর হুজুর ওকে শিখিয়েছে, সূরা ফাতিহা সর্ব রোগের উপশমকারী ঔষধ। তাই মনি সবসময় অপেক্ষায় থাকতো মামনি কবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।মনির জন্মের পর হতেই মামনির নতুন করে উপসর্গগুলো শুরু হয়েছে। তাই মামনিকে মাঝে মাঝেই রক্ত দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা লাগত। সেসময়গুলোতে মনি জানালার গ্রীল ধরে উদাস ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে মামনিদের ফেরার অপেক্ষা করতো। খেলাধূলা সব তখন পাটে উঠতো।খাবার নিয়ে ও কোনরূপ কষ্ট কাউকে দিতনা।আসলে ঐ মুহূর্তগুলোতে আমরা পুরোপুরি ভোল পাল্টে অতি ভদ্র হয়ে উঠতাম।মনে মনে প্রার্থনা করতাম সবকিছুর বিনিময়ে মামনির সুস্থতা। ডাব কাটার আওয়াজ থামছেনা দেখে আমি একদৌড়ে নীচে নামলাম।আমাদের এই বিল্ডিং অনেকটা ডুপ্লেক্স টাইপের। নীচতলার ডাইনিং রুমের একপাশ দিয়ে সিঁড়িটি দোতলায় উঠে গেছে। যাইহোক,ড্যাডির কাছে গিয়ে দেখি, ড্যাডি জগের মুখে একটা ডাব উপুড় করে ধরে আছে আর জগ উপসে পানি বাইরে পড়ছে।জগের বাইরের অংশের পানির ঢল দেখে বুঝতে পারলাম, জগ বহু পূর্বেই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।অতি টেনশনে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার দরুন ড্যাডি ব্যাপারটি দেখতেই পায়নি। আমার ডাকে অবশেষে ড্যাডির সম্বিত ফিরে এলো। মামনির অসুস্থতার সময়গুলোর কিছুটা চিত্র মনের নজরে অবলোকন করলেই যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবেই টের পেয়ে যাবেন আমাদের মনোজগতের টলমল বিদিশা অবস্থাটা। সেদিন বিকেলেই ড্যাডি মামনিকে চট্টগ্রাম ম্যাডিকেলে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে গেল।
সন্ধ্যার পরে আর কিছুই ভালো লাগেনা।মনিটা একচোখ বন্ধ করা অবস্থায় চশমা পড়ে কতক্ষণ টিভি দেখেছে।চোখের প্রব্লেম দেখা দেয়ার ডাক্তার বলেছেন, একচোখ বন্ধ করে টিভি দেখার জন্য। তবে এখন হয়তো মন ভালো না থাকায় টিভি বন্ধ করে জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দাদু বসে বসে তসবিহ জপছেন আর আমি ‘বেতাল পঞ্চ বিংশতি এবং বত্রিশ সিংহাসন ‘ বইটি নিয়ে টেবিলে বসে পড়তে লাগলাম। এর আগেরবার হসপিটালে মামনিকে রক্ত দিতে এসে পরিক্ষীত মামা এই বইটি উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন।মামনি হসপিটালের বেডে শুয়েই বইটি পড়া শেষ করেছিল।সময় কাটানোর জন্যই আগে পড়া বইটি আবারও পড়ছিলাম আর মাঝে মাঝেই টেবিলের উল্টো পাশের জানালার বাইরের বটগাছের ডালে বসে থাকা হুতোম প্যাঁচাটির দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। প্রতিরাতেই এটা এই ডালটিতে বসে আধো আলো আঁধারিতে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন বিশাল চোখের ড্যাবড্যাবে চাহনি দেখে গা শিউরে উঠেছিল।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু তরলং পর্যায়ে চলে গেছে।তাই প্যাঁচাটাকেও মামনির জন্য দোয়া করতে বললাম।তবে আজ আমরা কেউ কোন কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না।তাই সকাল সকাল রাতের খাবার খেয়ে আমাদের দুই ভাইবোনকে দুপাশে নিয়ে দাদু শুয়ে পড়লো। মনি আব্দারের সুরে বলল, নানু একটা গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও না। দাদু বললেন,আমার কোন গান মনে পড়ছেনা।মনি বলল, নানু তোমাকে আমি গান শিখিয়ে দিচ্ছি। তুমি শিখে নিয়ে তারপর আমাকে গেয়ে শোনাবে। এটুকু বলেই মনি গাওয়া শুরু করল, ‘আমার নানু, লক্ষ্মী নানু ঘুম আয়রে, মজার মজার স্বপ্ন নিয়ে ঘুম আয়রে।’ দাদু কিছু বলার আগেই হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল।এরকম অসময়ে সাধারণত কারেন্ট যাওয়ার কথা না। ঝড়,তুফান কিংবা কোনরূপ অসুবিধা হলেই শুধু মাঝে মাঝে কারেন্ট থাকেনা নতুবা সরকারি বাসাগুলোর মানুষেরা কারেন্টের বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন।অবশ্য এলাকার সাধারণ জনসাধারণ লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ থাকেন।দাদু উঠে একটা হারিকেন জ্বেলে টি-টেবিলে রাখলেন। এরপর কখন যে ঘুমের রাজ্যে আমরা ডুব দিয়েছিলাম তা ঠাহর করতে না পারলেও অকস্মাৎ প্রচণ্ড গোলাগুলির কান ফাটানো শব্দে সবাই কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলাম। ঠিক বসলাম বললে কিছুটা ভুল বলা হবে।আমি আর মনি নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে মনে করে দাদুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।এমনিতেই স্কুলে যাওয়া আসার পথে ইদানিং শুনতে পাই,৭১ সালের মতো নতুন করে জনতা আবার নাকি শুধু জেগে উঠার অপেক্ষায় টগবগ করে ফুটছে। সলতে ঘঁষামাজার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। যেদিন আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে সেদিন নাকি স্বৈরাচার এরশাদ লুকানোর পথ খুঁজে পাবেনা। দারোয়ান বাবুল ভাই ভয়ে একদৌড়ে দোতলায় আমাদের রুমে এসে ঢুকেই হারিকেনের সলতের নব ঘুরিয়ে কমিয়ে দিলেন। এরপর ফিসফিসিয়ে বললেন, এলাকায় নিশ্চয়ই ডাকাতদল আক্রমণ করেছে।কোনক্রমে হয়তো ওরা জেনে ফেলেছে স্যার বাসায় নেই, তাই হয়তো আজ রাতকেই বেছে নিয়েছে।আপনারা বেশি করে আল্লাহকে ডাকেন আর আমি ভগবানের নাম জপ করি।ব্রুম, ব্রুম শব্দগুলো আমাদের হৃদপিণ্ডকে বিদীর্ণ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এইতো কদিন আগেই কমপ্লেক্সের ভিতরে রাত দুটোর দিকে শোরগোল ভেসে এসেছিল, ডাকাত! ডাকাত! বাঁচাও! ড্যাডি সেদিন বীরের মতো দাদু আর মামনির উৎকণ্ঠিত ভাবকে উপেক্ষিত করে বন্দুক নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল ডাকাত দলের সাথে মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে যুক্তিখণ্ডন করার অভিপ্রায়ে বলেছিল, আজ আমি যদি না বের হই তাহলেতো অন্যরাও বেরুবে না। পৃথিবীর অলিখিত নিয়ম হচ্ছে , প্রধানদেরকেই সর্বাগ্রে এগিয়ে যেতে হয়। ডাকাতের ভয়ে ঘরের কোণে লুকানো আর যার হোক না কেন অন্তত আমার কর্ম না। অবশ্য ঘর থেকে বেরুনোর পূর্বে আরও একটি কাজও করেছিল।থানায় ফোন করে ওসি আঙ্কেলকে ফোর্স নিয়ে আসতে বলেছিলেন। ড্যাডিকে দেখে মনে হচ্ছিল রণসাজে ডাকাত নিধনে নয়, যুদ্ধ জয়ে বেরুচ্ছে। যদিও হাতের বন্দুকটি অতি সাধারণ পাখি মারার বন্দুক। ডাকাতদল নিশ্চয়ই ব্যাপারটি টের পাবেনা।
ঐ বন্দুক নিয়ে প্রতিদিন কতো পাখি শিকার খেলায় মেতে উঠি।কার্তুজ না ভরেই কাকের দিকে বন্দুকটি তাক করে যখন ট্রিগারে চাপ দিই বন্দুকের মুখ দিয়ে হুস করে বাতাস বেরিয়ে আসে আর অমনি কাকগুলো ভয়ে ক্রঁ ক্রঁ রবে দিশাহারা হয়ে উড়াল দেয়। যাইহোক, ড্যাডি ফেরার পরে জানতে পারলাম, সেদিন কোন ডাকাতদল কমপ্লেক্স আক্রমণ করেননি।প্রকৃত ঘটনা হলো, একটি ছিঁটকে চোর জানালার গ্রীল কেটে বড়ুয়া আঙ্কেলদের ঘরে ঢুকার চেষ্টা করেছিল।তাতেই উনাদের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ভয়ের চোটে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলেন।আর হুজুগে বাঙালি হিসাবে অন্যরা তাতে ঘৃত ঢেলে দিয়েছিল।তাই একই শোরগোল চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।আর সেই ফাঁকা আওয়াজের ফাঁক ফোঁকরে চোর পগারপার হয়ে গিয়েছিল।সেদিন কোন ডাকাত না এলেও আজ মনে হচ্ছে, আলীবাবা গল্পের চল্লিশ চোরের দল ঠিকই হাজির হয়েছে। গোলাগুলি থামাথামির কোন নামই যে নিচ্ছে না।ড্যাডি পাশে থাকলে আমি এতটা ভয় পেতাম না।ড্যাডিই সব কন্ট্রোল করে ফেলত। বাবুল ভাই ও আমাদের মতোই ভয়ে কুপোকাত হয়ে গেছে। বাবুল ভাই ফিসফিস করে বলল, নানু দেখেছেন ডাকাতদল ডাকাতির সুবিধার জন্য আগেভাগেই ইলেকট্রিক লাইন কেটে দিয়েছে।এমন সময় ডাকাত নিয়ে গুজবের আগের ঘটনার রেশ ধরে আমার হঠাৎ ওসি আঙ্কেলের কথা মনে পড়ল।এই পরিস্থিতিতে ওসি আঙ্কেলকে ফোন করে জানালেই তো হয়।সাথে সাথে টেলিফোন গাইড হতে হারিকেনের মিটিমিটি আলোয় কোনমতে নাম্বার খুঁজে বের করলাম।বাবুল ভাই কিছুতেই হারিকেনের আলো আরেকটু উজ্জ্বল করতে তো দিলেনই না উল্টো দুই পাশ থেকেই খবরের কাগজে ঢেকে দিলেন।কোনোমতে নাম্বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডায়াল করলাম। তখনকার সময়ে টেলিফোনে নাম্বার টিপার পরিবর্তে ডায়াসে আঙুল ঢুকিয়ে ঘুরাতে হতো। অপরপ্রান্তে আঙ্কেল ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই আচমকা শুকনো কলিজায় জোর ফিরে আসায় বেশ জোড়ালো আওয়াজেই কথা বলে ফেলেছিলাম।বাবুলভাই চোখ বড় বড় করে আমাকে একটু শাসনের সুরেই ধমকে ফোনের রিসিভার কেড়ে নিয়ে ওসি আঙ্কেলকে ফিসফিসিয়ে এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করলেন। হঠাৎ অপর প্রান্ত হতে ওসি আঙ্কেলের অট্টহাসির শব্দ ভেসে এল।কিছুক্ষণ পর আমরাও বেকুব বনে যাওয়ার আনন্দে হেসে নিলাম। এবার অট্টহাসির ব্যাখ্যাটুকু উপস্থাপন করি।সেদিনটি ছিলো ২৬শে মার্চ। আমাদের স্বাধীনতা দিবস।তোপধ্বনিকে আমরা ডাকাতদলের আকষ্মিক আক্রমণ ভেবেছিলাম। কাছাকাছি একজায়গায় বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা দেখা দিয়েছিল বিধায় সেদিন কারেন্টও ছিল না।হেসে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবিক ভাবে কিছুটা সময় আমরা কঠিন সময়ই অতিক্রম করেছিলাম।


বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, কিন্তু পশ্চিমারা চুপ: জয়

আ.লীগ প্রার্থীর সমাবেশে বন্দুক হাতে বিএনপি নেতা

নদী রক্ষা করতে না পারলে, দেশ রক্ষা করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

বুধ-বৃহস্পতি অবরোধ, রোববার মানববন্ধনের ডাক বিএনপির

রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আচারণবিধি লঙ্ঘন : নোয়াখালী-১ আসনের আ.লীগ প্রার্থীকে শোকজ

নোয়াখালীর ৬ আসনে এমপি কিরনসহ ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল গভীর নিম্নচাপ, নাম ‘মিগজাউম’

এলপিজি গ্যাসের দাম ২৩ টাকা বাড়ল

নির্বাচনের আগে সারা দেশে ওসি-ইউএনও বদলির নির্দেশ

হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল

অনিয়ম-দুর্নীতি-ই হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ

নোয়াখালী-৪ ও নোয়াখালী-৩ এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল 

নোয়াখালীতে যাত্রীবাহী বাসে হামলা, আহত-৫ 

নোয়াখালীর ৬ আসনে ৫৫ মনোনয়নপত্র জমা

এই সম্পর্কিত আরো