শারমিনের গল্প : একটি সাধারণ মেয়ের আত্মকথন (পর্ব-৪৬)

Friday, November 11, 2022

           শারমিন আকতার রানা


.

আমি আর মান্না বৃহস্পতিবার এলেই গেটের দুপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটোর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম।যেদিন অপেক্ষা শেষে ব্যর্থ মনোরথে ঘরে ফিরতাম সেদিন আমাদের মন খুব খারাপ হয়ে যেতো। মান্নাটা ছোট হওয়ায় বড্ড অবুঝ ছিল। আব্বার কথা ভেবে ওর চোখ ছলছল করে উঠতো। আমি তখন ওকে হাসানোর জন্য বলতাম, তোকে এই অবস্থায় দেখলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের চেহারা ভোজবাজির মতো বদলে এমন হয়ে যেতো(সেই মুহূর্তে আমি আমার চেহারায় রবীন্দ্রনাথ থাকলে কী করতেন সেই ভঙ্গি(কাল্পনিক) নিয়ে আসতাম)। তাতেও কাজ না হলে নজরুল, জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্র একে একে সবার মুখভঙ্গি উপস্থাপন করতাম যতোক্ষণ পর্যন্ত না মান্নার মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়তো।তারপর আমিও হাসিতে যোগ দিতাম। আর যেদিন আব্বা আসতেন সেদিন খুশিতে আমাদের মাটিতে পা পরতো না। আব্বা আসার সময় আমাদের জন্য টুকটাক অনেক কিছু নিয়ে আসতেন।হাতিয়াতে সেসময় পাউরুটি, মাখন এসব কিছুই পাওয়া যেতো না। আব্বা নোয়াখালী থেকে এগুলোও কিনে নিয়ে আসতেন। তারপর পাউরুটিতে মাখন লাগিয়ে আমাদেরকে খাইয়ে দিতেন। আপা আব্বাকে ভালোবাসলে ও এসব আলগা আদিখ্যেতার ধারে কাছে ছিল না।সে বরং আব্বার জামা কাপড় ধুয়ে, বিছানা গুছানো টাইপের কাজের মাধ্যমে তার ভালোবাসাটুকু প্রকাশ করতো।আর আমরাতো আব্বার কাছ থেকে নড়তেই চাইতাম না। আব্বা বাড়িতে এলে আম্মা অনেক মজার মজার পদ রান্না করতেন। আব্বা একফাঁকে টুক করে বাজারে গিয়ে মহিষের দই, গরম গরম রসগোল্লা নিয়ে আসতেন। আম্মার পছন্দের এই দুটো আইটেম আনতে আব্বা কখনোই ভুলতেন না। ছোট্ট ছোট্ট আনন্দে মাখানো মুহূর্তগুলো অসাধারণ হয়ে উঠতো। যদিও আপা একটু পর পর এসে পড়তে বসার জন্য চোখ রাঙিয়ে যেত তথাপি সেদিন আমাদের বুকের জোর এতো বেড়ে যেতো যে আমরা আপাকে ভ্রুকুটি দেখিয়ে পড়াশোনার ধারেকাছেও যেতাম না। লাইজু খালাম্মা ও সেসময় আমাদের সাথেই থাকতো। আপা আর লাইজু খালাম্মা কলেজে একসাথে পড়লেও সেও আপাকে আমাদের মতোই ভয় পেত।বিশেষ করে আপা ছিল বেশি গোছালো কিসিমের আর আমরা সবাই ছিলাম অগোছালো করায় ওস্তাদ। গোসল শেষে আমরা জামাকাপড় উল্টাপাল্টাভাবে ঘাটেই ফেলে আসতাম,গোছানো বিছানার উপর দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই যেন ঘূর্ণিঝড় বয়ে যেত আর পড়ার টেবিলও তথৈবচ অবস্থায় উপনীত হতো। সবকিছু আপাকে একা হাতে সামলে নিতে হতো বলেই হয়তো আমাদের দিকে একটু কড়া নজরদারি করতো। বিশেষ করে শীতের দিনে আপা নিয়ম করে দিয়েছিল কেউ একটার বেশি লেপ বা কম্বল ব্যবহার করতে পারবেনা। এদিকে লাইজু খালাম্মা ছিলো শীতকাতুরে। তাই আপা ঘুমানোর আগ পর্যন্ত একটা লেপেই সন্তুষ্ট থাকলেও এরপর কী ঘটতো তা পাঠক মাত্রই অনুমেয়। অবশ্য সকাল হলেই লাইজু খালাম্মা সাধু সেজে আপার চোখ এড়িয়ে আড়ে আড়ে চলাফেরা করতো।আপার নজরদারিতে আমার অবস্থাতো আরও শোচনীয় হয়ে উঠতো। আপার বই পড়া বা টিভি দেখার কোন শখই ছিল না। এমনকি টিভিতে যেদিন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ প্রচারিত হতো সেদিন আমার আপা ছাড়া আর কেউ টিভির আকর্ষণকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারতো কিনা আমার জানা নেই। আপার অযাচিত অত্যাচারে দুঃসহ গরমের দিনেও কাঁথার নিচে লুকিয়ে কিংবা পড়ার বইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে কিংবা টয়লেটের ভিতরে বসে বসে গল্পের বই পড়তে হতো। অবসরে পড়লে আপা কিছুই বলতোনা কিন্তু পড়ার নেশা এমনই কঠিন নেশা যে, কোন কিছু পড়ে শেষ করা পর্যন্ত একধরনের অস্থিরতায় ভুগতাম। তাই অনেক সময় পড়ায় ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে পড়া ছাড়া কোন গত্যান্তরও ছিলো না। অনেক সময় অবশ্য ধরা পড়ে যেতাম। পরীক্ষা সন্নিকটে এলেই আপা টিভি দেখার উপর ও নিষেধাজ্ঞা জারি করতো। সেসময়ে সবার বাড়িতে টিভি ছিল না। তাই যাদের বাড়িতে টিভি ছিল তাদের বাড়িতে আশেপাশের সবাই এসে একসাথে টিভি দেখতো।যদিও হাতিয়াতে স্বল্প সময়ের জন্যই কারেন্ট দিত, তাও ঠিক মতো থাকতোনা বিধায় টিভি চালানোর জন্য ব্যাটারী ব্যাবহার করতে হতো। যাদের বাসায় নিজস্ব ব্যাটারী না থাকতো তারা দোকান থেকে ব্যাটারী ভাড়া করে এনে টিভি দেখত।আর যাদের বাসায় ব্যক্তিগত ব্যাটারী ছিল তারাও ব্যাটারীতে চার্জ শেষ হয়ে গেলে দোকান থেকে নতুন করে চার্জ করিয়ে আনতো।আবার অনেক সময় কারেন্ট থাকলেও লো ভোল্টেজের কারণে টিভির পর্দা নাচানাচি করা শুরু করতো। তখন ভাইয়া ম্যাকগাইভারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আর্থিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভোল্টেজ বাড়িয়ে ফেলত।আবার কখনো কখনো টিভির এন্টেনা ঠিকমত কাজ করতো না। ফলে টিভির পর্দা অস্বস্তিকরভাবে ঝিলমিল করতো। তখন আমরা ‘মাইরের উপর ঔষধ নেই’ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে টিভিকে দ্রুম দ্রুম করে করে খান কতক লাগিয়ে দিতাম। অনেক কসরত করেই আমাদের টিভি দেখতে হতো। যেদিনগুলোতে সাপ্তাহিক বা ধারাবাহিক নাটক থাকতো কিংবা মাস শেষে সিনেমা দেখাতো সেই দিন গুলোতে বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হতো। অনুষ্ঠান শুরুর একঘণ্টা আগে থেকেই দর্শকের ঢল নামতো।পরবর্তীতে সাপ্তাহিক নাটকগুলোকে প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। নাটক শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বেই টিভি সেটটি ফুল ভলিউমে সুবিধাজনক স্থানে এমনভাবে সেট করে দরজা জানালা সব খুলে দেয়া হতো যেন ড্রয়িং রুম ছাড়িয়ে যারা বারান্দা এবং উঠানে বসতো তারাও যাতে ঠিক মতো দেখতে পারে।আম্মা সবসময় নাটক শুরুর আগেই বেশ আয়োজন করে আয়েশি ভঙ্গিতে খাটে হেলাল দিয়ে বসতেন। কিন্তু সব আয়োজনই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যেতো। কারণ টিভির বিকট আওয়াজ উনার সুখনিদ্রার উদ্রেক করতো। এতো হট্টগোলের মাঝে ও যে ঘুমানো সম্ভব সেটা আম্মাকে ঐসময়ে কেউ না দেখলে বিশ্বাস ও করতে পারবেনা। আর নাটক শেষে যখন টিভির সুইচ অফ করা হতো তখন উনি রীতিমতো ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতেন।যখনি শুনতেন এইমাত্র নাটক শেষ হয়েছে অমনি আফসোস করে বলতেন, ইশ! অল্পের জন্য মিস হয়ে গেল। সুলতু,,,,রে,নাটকের কাহিনী একটু মুখে মুখে বলতো।শুনলেই বুঝতে পারবো, কী ঘটেছিল? সুলতুকে আবার নাটকের অদ্যপ্রান্ত খুলে বলতে হত। ভাইয়া আবার মাঝে মাঝে মজার কাণ্ড করতো। হজুভাইয়া(ফজলু) মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে আসতেন ভাইয়ার সাথে একসাথে ডিসকাশন করে লেখাপড়া করার অভিপ্রায়ে।কিন্তু এলে কী হবে?উনি ছিলেন ভীষণ ঘুমকাতুরে। তাই সন্ধ্যা বেলাতে পড়তে বসলেই উনি পড়ার বদলে ভুল ক্রমে বোধহয়

ভেড়ার পাল কিংবা সুপারি গোণা শুরু করতেন।তারই খেসারত স্বরূপ গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতেন।আবার সবাই যখন টিভি দেখার জন্য এসে উপস্থিত হওয়ার পরে নাটক শুরু হতো ঠিক সেই মোক্ষম মুহূর্তেই কী করে যেন হজুভাইয়া ঘুম থেকে জেগে কাঁথা বা চাদর দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে টিভির সামনে এসে বসতেন। সবাই টিভি দেখার ফাঁকে ফাঁকে উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিতো। উনি কিছু বুঝতে না পেরে বেআক্কলের মতো সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেন।বোঝার চেষ্টা করতেন, উনিও কী নাটকের কোন চরিত্র হয়ে উঠেছেন কিনা?বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদেরকে সময় আরেকটু পিছিয়ে নিতে হবে। হজুভাইয়া যখন ঘুমিয়ে থাকতেন তখন ভাইয়া লুকিয়ে আপার পাউডার,কাজল,লিপস্টিক নিয়ে গিয়ে হজুভাইয়াকে সাজিয়ে দিতো।ফরসা অবয়বে চাদরের ঘোমটা দেয়া থাকায় উনাকে নতুন বউদের মতোই লাজুক দেখাতো। সবশেষে ভাইয়া, হজুভাইয়ার বিভ্রান্তি দূর করতে একটা আয়না এনে উনার মুখের সামনে ধরতো।গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে ভাইয়ার পিঠে দুড়দাড় কয়েকটি পড়তো আর ভাইয়া তারচেয়ে ও জোরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো।আগেই বলেছি পরীক্ষা এগিয়ে এলেই আপা মেলেটারীদের মতো ডিক্লেয়ার জারি করতো। একদিন ভিড়ের ভিতরে একটু লুকিয়েই টিভি দেখতে বসে গেছি। ভেবেছিলাম, আপা কিছুতেই টের পাবেনা। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।সবার সামনেই বকা দিয়ে পড়তে বসিয়ে দিল। কী আর করি?হাজার চেষ্টা করলে ওতো ঐ মুহূর্তে পড়া মাথায় ঢুকতো না। আপা নিজে টিভি না দেখার কারণে আমার কষ্টটা বুঝতে পারার কথাও না। তাই পড়ার বই খুলে সেদিকে তাকিয়ে চুপচাপ রেডিও শোনার মতো করেই নাটকের সংলাপগুলো শুনছিলাম। রেডিও শুনে যেরকম তৃপ্তি পাওয়া যায়, টিভির সংলাপ শুনে ওরকম কোনোভাবেই পাচ্ছিলাম না। বিকল্প কিছু খুঁজে পাওয়া যায় কি-না তা নিরীক্ষণ করতে গিয়ে টের পেলাম, টেবিলে আব্বার সবসময় ব্যবহারের আয়নাটা পড়ে আছে। ওটাকে নিয়ে এমনভাবে সেট করলাম যাতে টিভির পর্দা প্রতিফলিত হয়ে আয়নাতেই পড়ে।এরপর আমার টিভি দেখা কে আর আটকায়?আমার জাঁদরেল আপা কিছুই টের পেলোনা। কারণ সে যতোবার টহল দিয়ে গেছে প্রত্যেকবার আমাকে গভীর মনোযোগ সহকারে বই পড়তেই দেখেছে। আরেকবারতো প্যাকেজ নাটক শুরু হতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকী।তাও সেটা যে সে নাটক না।টিভিতে প্রচারিত প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে ‘ বলে কথা। প্যাকেজ জিনিসটি আসলে যে কী তা নিয়ে বেশ রমরমা আলোচনার শোরগোল উঠেছিল। সবাই যার যার মতামত ব্যক্ত করে যাচ্ছিল।এরমধ্যে হুট করে কারেন্ট চলে গেল। মামুনকে(মামা) সাথে সাথেই পাঠিয়ে দেয়া হলো দোকান থেকে ব্যাটারী নিয়ে আসার জন্য।এখনো আসার নামগন্ধও নেই। অথচ আমাদের গেট থেকে বেরুলে ডানপাশেই ব্যাটারীর দোকান।আমি আর মান্না অস্থির হয়ে উঠানের এমাথা হতে ওমাথায় পায়চারী করছিলাম। এমন সময় মামুন ফিরে এসে বলল,দোকানে নাকি সে আমাদের ব্যাটারী দেখতেই পায়নি। অনেক তর্ক বিতর্কের পর সে ফিরে এসেছে। এটা শুনেতো মান্না অগ্নিশর্মা হয়ে ফেটে পড়তেই শুধু বাকি ছিল। এরমধ্যে টিভি দেখার জন্য যারা এসে জড়ো হয়েছিল তারাও উসখুস শুরু করে দিল।সবার একটাই আফসোস প্রথম প্যাকেজ নাটকটিই না ভাগ্যের মুখে মুলো ঝুলিয়ে মিস হয়ে যায়?মান্না হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে তীরবেগে একাকী গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। ওর ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার নয় দেখে আমি আর মামুন ওর পিছু পিছু ছুটলাম। সে দোকানের সামনে গিয়ে ফুল ভলিউমে বলে বসলো, ‘আমির,,রা’ এরপর কিছুটা হকচকিয়ে লো ভলিউমে বললো, ভা,,,,ই।দোকানদার এটুকুতেই পুরোপুরি হজম হয়ে গিয়ে অন্য একজনের ব্যাটারী আমাদেরকে দিয়ে দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ঐদিন লোভে পড়ে আমাদের ব্যাটারী চওড়া দামে অন্য কারো কাছে দোকানদার ভাড়া দিয়ে দিয়েছিল।পরবর্তীতে এই সংলাপটি আওড়ে আমি আর মান্না প্রায় হেসে গড়াগড়ি খেতাম। মান্নার চণ্ডাল রূপ দেখে দোকানদার আমির একদিন যেভাবে ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল তেমনি ভাবেই আরেকবার মান্নার আরেকটি রূপ অবলোকন করে আমি নিজের কাছে নিজেই বড় শরমিন্দা হয়ে গিয়েছিলাম।একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে হঠাৎ চায়ের পিপাসা পেল।ফ্লাক্স থেকে চা ঢালতে গিয়ে দেখলাম তা আগেই শুন্য হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে এককাপ লাল চা বানালাম। আমি বিশ্বাস করতাম, আমার বানানো চা আমি ছাড়া দ্বিতীয় কারো পক্ষে পান করা প্রায় দুঃসাধ্যেরই নামান্তর।কারণ আমি চায়ের সবক নিয়েছিলাম হুজানদাদুর কাছে। উনি মগভরা চিনি ছাড়া কড়া টাইপের তেতো চা পান করতেন। আমি সেই চায়ের লোভে উনার আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। উনি পিরিচে চা ঢেলে আমাকে খাইয়ে দিতেন। সেজন্যই আমার মুখে তেতো চা ছাড়া রুচে না।তাই আমি বিপদে পড়ে(চা বানিয়ে দেয়ার জন্য কাউকে না পেলে) দুএকবার নিজের জন্য চা বানালেও তা আর কারো সাথে শেয়ার করতাম না।

যাইহোক, নিজের সাফাই না গেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাক।আমিতো মৌজ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। হঠাৎ দেখি, মান্না পড়ার বই উল্টো করে রেখে গটগট করে রান্নাঘরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর দু’হাতে দুই মগ চা নিয়ে ফিরে এলো। একটা মগ চুপচাপ আমার সামনে রেখে দ্বিতীয়টিতে নিঃশব্দে চুমুক দিল। সেই প্রথম বুঝতে পারলাম, কীভাবে প্রতিশোধ না নিয়ে ও কাউকে সমুচিত সাজা দেয়া যায়। অভিমানী বোনের অভিমান ভেঙে হেসে উঠা পর্যন্ত আমি নানান কসরত চালিয়ে গেলাম। তবু মনের কোণে একটা অদৃশ্য সুচ মাঝে মাঝেই খোঁচা মেরে কথাটা স্বরণ করিয়ে দেয়। মান্নাটা গান গাইতে ভালোবাসতো বলে আব্বা ওর জন্য হারমোনিয়াম, তবলা কিনে আনলেন আর সবুজদাকে ওকে গান শেখানোর দায়িত্ব দিলেন। আমি গাইতে না পারলেও শুনতে ভীষণ পছন্দ করতাম।তাই পর্দার আড়ালে কান খাড়া করে বসে থাকতাম।সামনাসামনি গান শোনার সুখ হতে বঞ্চিত হচ্ছিলাম বিধায় আব্বাকে বললাম, আমি তবলা বাজানো শিখতে চাই। আব্বা সাথে সাথেই সবুজদাকে বলে দিলেন।কিন্তু কিছুদিন পরে খেয়াল করলাম আমার হাতের আঙ্গুলের গিট গুলোতে কড়া পড়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। জাকির হোসেনের তবলার বোল গুলো শুনে ভাবতাম তবলা বাজানো নিশ্চয়ই অনেক সোজা আর আনন্দের। এখনতো দেখছি বিষয়টি যতটা সহজ ভেবেছিলাম আদতে অতটা সহজ না।তাই তবলা শেখায় সেখানেই ছেদ টেনে দিয়েছিলাম।জাত শিল্পী ছাড়া শিল্প হতে সঠিক বোল বা রস কিছুই বের হয়না। তাই আমাকে ভক্তের আসনেই বেশি মানায়।মান্না যখন উদাত্ত কণ্ঠে “লাল ঝুটি কাকাতুয়া “, “হলদে পাখির বিয়ে আজি”, “থাকিলে ডোবা থালা হবেকো জুরি পানা ” কিংবা “ও তোতা পাখিরে” গেয়ে উঠতো তখন মনে হতো আমি নিজেই যেন গাইছি।আর সুরের লয়ে মনটা হালকা হয়ে উড়ে উড়ে যেতো। ধীরে ধীরে স্কুলের বিভিন্ন পোগ্রামে মান্না নাচ, গান আর বিতর্কে অংশ গ্রহণ শুরু করল। যেকোনো অনুষ্ঠানের আগে যেন মান্নার রিহার্সেল ঠিক মতো হয় সে বিষয়ে আমি ওর চেয়ে ও বেশি ওয়াকিবহাল থাকতাম। বেশিরভাগ সময়তো পুরো টিম আমাদের বাড়িতে এসে রিহার্সাল করতো।” গগনে গগনে হুঙ্কারিয়া ছোটে মেঘ, শনশন বায়ু বহে চৌদিকে ” গানটির সঙ্গে নাচার সময় ওকে ঐ গানের অংশ বিশেষ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিনি। একবার এ,এম,হাই স্কুলে একটি উম্মুক্ত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। সেখানে তার বন্ধু মুন্নী আর সে দুই সতীনের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। যদিও সেটাই ছিল ওদের দুজনের প্রথম এবং শেষ অভিনয়।এদিকে ঘটে চলেছিল আরেক চমৎকার ঘটনা। দ্বীপ কলেজের নির্বাচনী হাওয়ার তালে তালে আমার নিরস আপা হঠাৎ করেই যেন সরব হয়ে উঠলো। ওর বন্ধু বান্ধবের প্রচারণার মিছিলে তাকে সামনের সারিতে হরহামেশাই দেখা যেতে লাগল।অবশ্য এর পিছনে একটা বিশেষ কারণ ও হয়তো ছিল। সাজ্জাদ ভাইয়া( আপার ভবিষ্যত দেবর) ভিপি পদে আর সেজনু আন্টি(আপার প্রিয় বন্ধু) সাধারণ সম্পাদিকা পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল। এক্ষেত্রে লাইজু খালাম্মা আর আপা দুজন দুই দলের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতে লাগলো।আমি আর জলি(আমার প্রিয় বন্ধু) অবাক বিস্ময়ে ওদের কাণ্ড কীর্তি দেখে যাচ্ছিলাম।অবশেষে লাইজু খালাম্মার প্যানেলকে পরাজিত করে আপার দল নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে কলেজে সংসদ গঠন করল। সেই খুশিতে আপা প্রতিদিন ক্লাস শেষে সংসদ রুমে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে বাড়িতে ফিরতো। আড্ডার ফাঁকে চা আর শক্ত ড্রাইকেক(সেই বিশেষ বিস্কুট গুলো এখন বিলুপ্ত) পরিবেশন করা হতো। ঐ ড্রাইকেকগুলো আমি খেতে ভীষণ পছন্দ করতাম বলে আপা টুক করে ড্রাইকেক ডায়েরির ফাঁকে লুকিয়ে ফেলতো।বাড়িতে এসে মিষ্টি করে একটুশখানি হেসে ডায়েরির ফাঁক থেকে ড্রাইকেক বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিতো।ঐ ড্রাইকেকগুলো আমার কাছে সাত রাজার ধন এক মানিকের চেয়েও মূল্যবান ছিল। কারণ,এই বিস্কুট গুলো যে ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো ছিল।


বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, কিন্তু পশ্চিমারা চুপ: জয়

আ.লীগ প্রার্থীর সমাবেশে বন্দুক হাতে বিএনপি নেতা

নদী রক্ষা করতে না পারলে, দেশ রক্ষা করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

বুধ-বৃহস্পতি অবরোধ, রোববার মানববন্ধনের ডাক বিএনপির

রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আচারণবিধি লঙ্ঘন : নোয়াখালী-১ আসনের আ.লীগ প্রার্থীকে শোকজ

নোয়াখালীর ৬ আসনে এমপি কিরনসহ ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল গভীর নিম্নচাপ, নাম ‘মিগজাউম’

এলপিজি গ্যাসের দাম ২৩ টাকা বাড়ল

নির্বাচনের আগে সারা দেশে ওসি-ইউএনও বদলির নির্দেশ

হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল

অনিয়ম-দুর্নীতি-ই হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ

নোয়াখালী-৪ ও নোয়াখালী-৩ এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল 

নোয়াখালীতে যাত্রীবাহী বাসে হামলা, আহত-৫ 

নোয়াখালীর ৬ আসনে ৫৫ মনোনয়নপত্র জমা

এই সম্পর্কিত আরো