শারমিনের গল্প : একটি সাধারণ মেয়ের আত্মকথন (পর্ব-৪৯)

Tuesday, November 15, 2022

           শারমিন আকতার রানা


.
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকের গাছপালাগুলো দেখছিলাম।হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে ঝোঁকের বশে এভাবে চলে আসার কথা মনে পড়তে গা ছমছম করে উঠলো। কোন বিপদে পড়বোনাতো? সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে একজন লোকসহ বর্ণা এসে উপস্থিত হল এবং সবকিছু সুন্দর ভাবে মিটেও গেল। একহাজার টাকা মুঠোয় নিয়ে বাসায় ফেরার সময় বর্ণাকে বললাম, বোকার মতো কোন ডকুমেন্ট না রেখেই চেইনটা দিয়ে আসলাম কী করে? একবারও কেন মাথায় এলোনা শুধু মুখের কথায় বন্ধক রাখা উচিত নয়? বর্ণা বলল, আগে একবার উনার কাছ থেকে একজনকে আমি ধার নিতে দেখেছি। লোকটা ভালো না হলে নিশ্চয়ই এককথায় চেইনটা যাচাই না করেই টাকাগুলো দিয়ে দিত না। তাছাড়া আমরা যদি এখন আবার লোকটার কাছে ফেরতও যাই তাহলে লোকটা হয়তো তাকে অবিশ্বাস করার জের হিসাবে টাকাটা ফিরিয়েও নিয়ে যেতে পারে। বললামঃ থাক বাদ দে। আল্লাহই যখন এই বিপদের হাত হতে উদ্ধারের পথ দেখিয়েছেন তাহলে লোকটা নিশ্চয়ই ভালো মানুষই হবেন। উপকারী বন্ধুকে নিয়ে এমন অহেতুক সন্দেহ করায় নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলাম। তাছাড়া উনি বলেছেন, মূল টাকাটা ফেরত দিলেই চেইনটি ফেরত দিবেন। বন্ধক বাবদ কোন বাড়তি টাকা ও দিতে হবে না। বাড়িতে ফিরে দাদুর হাতে টাকাটা দিয়ে বললাম, বর্ণা সহ গিয়ে একজনের কাছ থেকে ধার করে এনেছি। চেইনের বিষয়টি চেপে গেলাম। গলায় ওড়না ভালো মতো পেঁচিয়ে রাখলে কেউ আশাকরি ব্যাপারটি টের পাবেনা। আম্মা আর দাদু খুব খুশি হলেন টাকাটা পেয়ে। টাকাটা জোগাড় হওয়ায় বড় খালাম্মা পরদিনই সহিসালামতে লামার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পেরেছিলেন। একহাজার টাকা ধার নেয়ার পিছনে আমার মাথায় একটা বিশেষ চিন্তা কাজ করেছিল।ভেবেছিলাম, বড় কাকা মৌমাছির চাষাবাদ করা বাবদ যে টাকাটা পাঠাবেন তা দিয়েই বন্ধক রাখা চেইনটি ছাড়িয়ে আনব। এখনো ডাক মারফত টাকাটা না আসায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। তবে কী বড়কাকা চিঠিটি পাননি? একদিন সকালে ডাকপিয়নের মধুর স্বর(সেই দিনটিতে ডাকপিয়নের ডাক কানে অতি মধুই বর্ষন করেছিল।) শুনে ছুটে গেলাম। দাদুর কাছ থেকে বখশিশ নিয়ে ডাকপিয়নের হাতে দিয়ে অবশেষে সিগনেচার করে টাকাটা বুঝে নিলাম।বর্ণা তখন ও আমাদের বাড়িতেই ছিল। ওকে নিয়ে ছুটে গেলাম বন্ধকী চেইন ছুটিয়ে আনতে। আল্লাহর অশেষ রহমতে লোকটাকে টাকাটা দেয়ার সাথে সাথেই চেইনটি ফেরত দিয়ে দিল।আর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, সেদিন তোমার চেহারা দেখেই বুঝেছিলাম তুমি কোন ফটকা বাজ না, সত্যিকারের বিপদে পড়েই সাহায্যের আশায় এসেছিলে।চেইনটা না রাখলে তুমি হয়তো টাকাটা নিতে ইতস্তত বোধ করতে। তাই চেইনটি বন্ধকস্বরূপ না রেখে আমানত মনে করে সবসময় সাথে নিয়ে ঘুরেছি।উনাকে শুধু বলেছিলাম, আপনি সেদিন আমার যে উপকার করেছেন তাতে আপনাকে সামান্য ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না।আপনি আসলেই অনেক বড় মনের একজন মানুষ।
.
এরপর আর কোনদিন এই মহানুভব লোকটির দেখা না পেলেও উনি আমার মনে অতি উচ্চ আসনেই বিরাজ করছেন। পৃথিবীতে আজো ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হয়তো পৃথিবীর ভারসাম্য সমুন্নত আছে। উনার জন্য অন্তরের দোয়া সবসময় থাকবে। বাসায় ফিরে জলির কাছে গেলাম। ওরা আমাদের পুকুরের উল্টো দিকে মনির মিঞাদের বাড়িতে ভাড়া থাকে। ওছখালীতে নতুন বাড়ির কাজ শেষ হলেই ওরা চৌরঙ্গী ছেড়ে পাকাপাকিভাবে ওছখালীতে চলে যাবে। জলিকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বললাম , আপাতত কিছুদিন আমাদের ব্যাবসা বন্ধ রাখতে চাই। জলির তাতে সায় না দেয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। কারণ জলিও তার অংশের টাকাটা তখনও জোগাড় করতে পারেনি। তাই সেই যাত্রায় সুন্দর মিমাংসা হয়ে সব পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে গেল। আমি এর আগে ও একবার উল্লেখ করেছিলাম, মাঝে মাঝেই আমার মনে বট বৃক্ষ হওয়ার স্বাদ জেগে ওঠে। এই ধারণা আমার মনে প্রথম শিকড় গেড়ে বসেছিল বড়কাকাকে দেখেই।বড়কাকা আমাদের কাছে বটবৃক্ষ। আমার ধারণা প্রতিটি যৌথ পরিবারে একজন করে বটবৃক্ষ থাকেন। সেই বটবৃক্ষ ভোগের ক্ষেত্রে কৃচ্ছসাধন করে ত্যাগেই যত আনন্দ উপভোগ করেন। এখানেই অপরাপর মানুষের সাথে বটবৃক্ষ কিসিমে’র মানুষের পার্থক্য। সবাই যখন নিজস্ব গন্ডির ঘেরাটোপে আটকে গিয়ে এই জীবনে কী পেলাম আর কী পেলাম না সেই হিসাব কষতে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে দেয় তখনো এই মহান মানুষেরা বিয়ের মতো কঠিন মায়াজাল থেকে দূরে সরে সবার চাওয়া পাওয়া পূরণেই নিজেকে নিমজ্জিত রাখেন। স্বাধীনতার প্রকৃত রসের সুগন্ধ এমন ধারার মানুষেরায় পেয়ে থাকেন। আমার বড়কাকা ও সবার মাথার উপর আরামদায়ক জলছাদ হয়ে থেকে ছায়ায় বিলিয়ে গেছেন। এর বাইরে আরেকটি জগতকেও উনি আপন করে নিয়েছিলেন। অবসর মুহূর্তগুলোতে বইয়ের বিচিত্র জগত উনাকে দখল করে নেয়। উনার রুমের চারদেয়াল বইয়ের অরণ্যে ঘেরা।বড়কাকার সেই নিজস্ব রাজত্বে কেউ একবার প্রবেশ করলে তার শান্তিতে পুরো মন জুড়িয়ে যাবে। উনি হয়তবা আশাবাদী ছিলেন আমি একদিন শুদ্ধ মধুর সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠবো। আমার স্বপ্নটা কেন অধরাই থেকে গেল সেই গল্পটা বড়কাকার অগোচরেই থেকে গেল। সত্যিকার অর্থে উনাকে যতটা ভালোবাসি ঠিক ততটাই ভয়ও করি। তাই অন্যদের সাথে অবলীলায় সব কথা যেভাবে বলে যাই তেমনটা কখনোই বড়কাকার সাথে পারিনি। বড়কাকা আমার আর মান্নার জন্য যে টাকাটা পাঠাতেন তা দিয়ে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় কেনা বই দিয়ে ঘর ভরে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। আমাদের হবু দুলাভাই ও আমাদেরকে প্রচুর বই উপহার দিতেন।আবার ফটো স্টুডিওর মালিক গৌতম দার কাছ থেকে ও কয়েক কার্টুন বই আমাদেরকে এনে দিয়েছিলেন। হবু বলার কারণ, তখনো সম্পর্কটা ভাই থেকে দুলাভাইতে রূপান্তরিত হয়নি। সেই নাটকীয় অসাধারণ গল্পটা পরে কোন একসময় করা যাবে।তাছাড়া তুষার ভাইয়াও(আমাদের জ্যাঠাত ভাই) কয়েকদিন পর পর আমাদের বইয়ের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য কিছু পুরাতন বই দান করে যেতেন। আমার আর মান্নার ধারণা, বইগুলো উনি কোথাও থেকে পড়ার জন্য ধার করে নিয়ে আসতেন। পরবর্তীতে সেই ধারের বইগুলো সঠিক মালিককে ফেরত না দিয়ে আমাদের লাইব্রেরীতে দান করে দিতেন।
.
এটা নিয়ে আমরা যখন উনাকে ক্ষেপাতাম তখন কোন উত্তর না দিয়ে মিটমিটিয়ে রহস্যময় হাসিতে মুখখানাকে ভরিয়ে তুলতেন। এভাবে নানান প্রক্রিয়ায় যখন আমাদের বইয়ের ভান্ডার পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে গেল তখন আমি আর মান্না মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, পরিচিত কিংবা অপরিচিত যারাই বই পড়তে আগ্রহী তাদের প্রত্যেককে আমরা বই পড়তে দিব। শুধু পাঠকদের একটা নিয়ম পালন করে বইগুলো পড়তে নিতে হবে। একটা খাতায় সিগনেচার সহ যেই বইগুলো পড়তে নিবে তা এন্ট্রি করে যেতে হবে এবং ফেরত দেয়ার সময়ও তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। আর সেই সাথে একটা সতর্ক বানী মেনে চলতে হবে।অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম যে কেউ কেউ নতুন বই পড়তে নিলেও ফেরত দেয়ার সময় মনে হয় আস্তাকুঁড় থেকে বইখানা কুঁড়িয়ে এনেছে।তাই আমরা পাঠকদেরকে যত্ন সহকারে বইটি পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করতাম। দুটো বিশেষ কারণে আমরা এই রুলগুলো জারি করেছিলাম। আগে স্বল্প পরিসরে কিছু মানুষ বই পড়তে নেয়ায় কে কী বই পড়তে নিয়েছে সেটুকু মনে রাখাটা সহজ হলেও এখন যেহেতু উম্মুক্তভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি শুরু করতে যাচ্ছি তাই এতো হিসাব মাথায় রাখতে গেলে সব গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। আর একটি বিশেষ কারণ হলো, বই চুরি করাকে অনেকেই মহৎ শিল্পকর্মের অংশ ভাবতেই ভালোবাসেন।যদিও হাতিয়াতে বই পিপাসু জনের অভাব ছিল না তথাপি হাতে গোণা কয়েক ফ্যামেলিতে বইয়ের সমৃদ্ধ কালেকশন ছিল। আবার অনেকের বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে কুলাতোনা।দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থাতে ‘গণ উন্নয়ন গ্রণ্থাগার’ ছিল। আমরাও ওখানকার সদস্য ছিলাম।কিন্তু পিপাসা মেটার মতো তেমন বই সেখানকার কালেকশনে ছিল না। আবার আমাদের এ,এম,হাই স্কুলেও নতুন করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য লাইব্রেরি চালু করেছিল। আমার বন্ধু লিনাদের বাড়িতে ও প্রচুর ভালো ভালো বইয়ের সম্ভারে পূর্ণ ছিল। আযম ভাইয়ের (লিনার মেজভাই) প্রচুর বই কেনা এবং পড়ার বাতিক ছিল। সেই ধারায় লিনা ও রত্না দুই টুইন বোনও ভেসে যাওয়ার সময় আমাকেও সঙ্গী করে নিতে ভুলেনি।আমার বন্ধু মরিয়মেরও অনেক ভালো বইয়ের কালেকশন ছিল। সেগুলো ও গোগ্রাসে পড়তাম। আবার যখন হাতের কাছে পড়ার মতো নতুন কোন বই খুঁজে পেতাম না তখন আবু বকর বিন কাশেমের বইও পড়েছি। হাতিয়াতে অনেকের পছন্দের লেখকের তালিকাতে উনার নাম থাকলেও কেন জানি উনার লেখা বই পড়ে আমি আলাদা কোন রস খুঁজে পেতাম না। আমি এখানে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে লেখাটি লিখিনি।ঐ দিনগুলোতে আমার মনের সত্যিকারের অনুভূতিগুলোয় শুধু ব্যক্ত করে গেছি। পাঠকমাত্রই ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্দ্ধে নয়।হাতিয়াতে উনার প্রচুর ভক্ত আছে বিধায় এই অধমকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। এমনিতেই মানুষ ছেলেবেলায় যে অনুভূতিগুলো নিয়ে বাঁচে বড় হতে হতে তাতে অনেক পরিবর্তন চলে আসে। তবু ছোট বেলার কোন স্মৃতিতে কেন জানি কাঁচি বসাতে ইচ্ছা করেনা।ভালো মন্দ সবমিলিয়েই একজন মানুষ পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। বড়কাকা আমাদেরকে কিশোর পত্রিকা আর রহস্য পত্রিকারও গ্রাহক করে দিয়েছিলেন। পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হওয়া মাত্রই পোস্টঅফিস মারফত আমাদের কাছে পৌঁছে যেতো। অবশ্য দৈনিক পত্রিকা সবসময় বাসী অবস্থায় পড়তে হতো। কারণ হাতিয়াতে পত্রিকা পৌঁছাতে দুই একদিন বিলম্ব হয়ে যেতো।আম্মা আর দাদুও বইয়ের মনোযোগী পাঠক ছিলেন।
.
আম্মাকে প্রায় দেখতাম রাঁধতে রাঁধতেই বই পড়ছেন।আব্বা বাড়িতে এলে বিশ্রাম করার সময় শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন।সেই সময়গুলোতে আম্মা ও আব্বার সঙ্গী হয়ে একই সাথে পড়তেন। শুধু আপাটা ব্যতিক্রম ছিল। সারাক্ষণ খুটখাট কিছু না কিছু করেই যাচ্ছে। আমরা সারাদিন অগোছালো করার ধান্দায় ব্যস্ত থাকতাম আর আপা কী করে সব পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখবে সেই চিন্তায় অস্থির থাকত। মাঝে মাঝে বড়কাকা বাড়িতে এলে কেউ যখন আমাদের নামে নালিশ জানিয়ে বলতেন, লেখাপড়ার ধারে কাছে ও নেই, সারাদিন আউট বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকে। তখন বড়কাকা উল্টো সবাইকে বোঝাতেন এই বলে, যারা সারাক্ষণ বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকে তাদের চিন্তার জগৎ অন্যদের চেয়ে প্রশস্ত হয় এবং তাদের খারাপ কিছুতে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। এজন্যই বুঝি বড়কাকা আমাদের পড়ার জগতে কারোর বাগড়া দেয়া পছন্দ করতেন না। তাই হয়তো বেশির ভাগ ফ্যামিলির চাইতে স্কুলের গন্ডি বদ্ধ পড়াশোনার বাইরে যে কোন বই পড়ার ক্ষেত্রে আমরা একটু বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতাম। শুধু পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে আপা কোন বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করতো না।যাইহোক, একদিনতো একটি বই হাতে নিয়ে মাসুদ মামা সন্ধ্যার একটু আগে এসে উপস্থিত হল। সেদিনই ঢাকা থেকে এসেছে। আসার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্থাগার থেকেই বইটি নিয়ে এসেছে। বইটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলল, যদি আজ রাতের ভিতরে বইটি পড়ে শেষ করতে পারিস তাহলে তোকে বইটি পড়তে দিতে পারি।আগামী কাল সকালেই আমি আবার ঢাকা চলে যাব। এটা এমন একটা বিশেষ বই শেষ না করতে পারলে তোর আবার আফসোস থেকে যাবে।থাক, বাদ দে।তোর পড়া লাগবে না। আমি পরমুহূর্তেই তার কাছ থেকে বইটা লুফে নিলাম। যে কোন বই হাতে এলেই আমি প্রথমে মলাটের গন্ধ শুঁকে তারপর বইয়ের নাম এবং কাকে উৎসর্গ করা হলো তা পড়ি।এবারও এর ব্যতিক্রম না হলেও একটু তাড়াহুড়োতো অবশ্যই ছিল। সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা ‘ উপন্যাসটি নিয়ে পড়তে বসে যেতে কালক্ষেপণ করলাম না। এমনিতেই মাসুদ মামার সাহিত্য বিষয়ক জ্ঞান খুবই প্রখর। ভালো কিছু না হলে এতোদূর থেকে বহন করে আমার জন্য নিয়ে আসতো না। সে নিজেও মাঝে মাঝে শখের বশে লেখে।লেখার মান প্রথম সারির।কিছুদিন আগেই একবার ঢাকা থেকে আসার পথে তার লেখা “স্বপ্নের দিনপঞ্জি ” নামক একটা পান্ডুলিপি আমার জন্য উপহার স্বরূপ নিয়ে এসেছিল। এতো সুন্দর উপহার আমি বেশিদিন আমার কাছে ধরে রাখতে পারিনি।হাতিয়া ভিত্তিক “দ্বীপায়ন” পত্রিকা পান্ডুলিপিটি নিয়ে গিয়ে লেখাটা পত্রিকায় প্রকাশ করলেও কেন জানি অরিজিনাল কপিটি আমাকে ফেরত দেয়নি। এটা নিয়ে আমার মনে একধরনের ক্ষোভ কাজ করতো। ‘কালবেলা ‘ উপন্যাসটি হারিকেনের আলোটুকু সম্বল করে পড়া শুরু করলাম। কারণ, আজ কারেন্টই আসেনি। পড়ার ভিতরে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে সেদিন কোন ক্ষুধা ও লাগেনি কিংবা বলা যায় টেরই পাইনি। তাই অযথা রাতের খাবার খেতে গিয়ে সময় নষ্ট করার কথা চিন্তা ও করতে পারলাম না। আমার এমনিতেই কোন লেখা পড়তে গেলে একটু বেশি সময় লাগে অন্যদের তুলনায়। ঘটনার চরিত্রগুলোর সাথে মিশে যাওয়া পর্যন্ত লেখাটা পড়ে কোন তৃপ্তি পাইনা।এরমধ্যে দাদু কানের কাছে কতক্ষণ ধরে খাওয়ার জন্য বিভিন্ন অযুহাত দেখাতে লাগলেন। শেষে বললেন, রাতের বেলা না খেয়ে থাকলে এক চড়ুই পাখির বল কমে যাবে।অবশ্য রাতের বেলা ভাত না খেলেই দাদু সবসময় এই বুলিটি ঝাড়েন। তাই ভ্রুক্ষেপ না করে দাদুকে একটু জড়িয়ে ধরে আবারও পড়াতে মনোনিবেশ করলাম। শুভ্র রূপের আচ্ছাদন দাদুকে সবসময়ই একধরনের পবিত্র সৌন্দর্যে জড়িয়ে রাখত। আমি দাদুকে সাদা শুভ্র বস্ত্র পরিধান করা ছাড়া অন্য রূপে কখনো দেখিনি।সাদা থেকে যেন সবসময় দ্যুতি বেরুতো।বড়দাদুর মৃত্যুর পর থেকে দাদু সাদাতেই স্বস্তি খুঁজে পেতেন। একে একে সবাই শুয়ে পড়ার পর হারিকেনের সলতে কমিয়ে দিয়ে চিমনির একপাশে বই উপুড় করে রেখে একধরনের আড়াল সৃষ্টি করলাম যাতে কারো কোন রূপ ডিস্টার্ব না হয়।এরপর ঐটুকুন ঝাপসা আলোতে ভোরের আলোর আবির্ভাবের আগমুহূর্তে লেখাটা পড়ে শেষ করলাম। শেষ হওয়ার পরেও এরপর কী ঘটতে পারে তা নিয়েই বিভোর হয়ে রইলাম। প্রত্যুষে মাসুদ মামা আমাদের বাড়িতে আসার পরে জানতে পারলাম, সে আরো দুই দিন হাতিয়াতে থাকবে।আমাকে নিছক পরীক্ষা করার জন্যই বলেছিল, তার টিউটরিয়াল পরীক্ষা আছে। তাই চলে যাবে। বেকুব বনে যাওয়ার পরেও আফসোস লাগলো না। কারণ কালবেলা বইটা পড়তে শুরু করলে তার এতোটাই আকর্ষণ ক্ষমতা যে শেষ না হওয়া অব্দি উঠাটা বেশ মুশকিল।


লঞ্চ মালিকদের অতি লোভে দুর্ভোগের শিকার হাতিয়ার যাত্রীরা

যুবলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা, ইয়াবাসহ প্রধান আসামি গ্রেফতার

পাতা কুড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ শিশুর মৃত্যু

হাতিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে কিছু করার নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্ত্রীর ওপর অভিমান করে প্রবাসীর আত্মহত্যা

‘খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এর হিসাব কড়া-গন্ডায় সরকারকে দিতে হবে’

হাতিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলেন ইউএনও

নোয়াখালীতে ওয়ান শুটার গানসহ ২ তরুণ গ্রেফতার

হাতিয়ায় বিদ্যুৎ ভবন উদ্বোধন করলেন স্থানীয় এমপি

হাতিয়ায় স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

হাতিয়ায় নবাগত ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়

পকেটে মিলল গুলি, শয়ন কক্ষে ওয়ান শুটারগান, গ্রেফতার ৩

আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই : মির্জা ফখরুল

এই সম্পর্কিত আরো