গল্প : তোমায় গান শুনাবো (পর্বঃ ৪)

Wednesday, February 15, 2023


শারমিন আকতার রানা


গত কয়েক দিন ধরে কতোবার যে জিহানের সাথে ম্যাসেঞ্জারে বলা কথাগুলো রিভাইজ করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। এভাবে যদি ছাত্র জীবনে পড়তাম তাহলে বোধ হয় স্ট্যাণ্ড করাটা কেউ ঠেকাতে পারতো না।এতো পড়ি তবু্ও যেন আঁশ মেটেনা।মুচকি হেসে আবার ও মেসেজ গুলো পড়তে শুরু করলাম। আমি দিন দিন বুড়ো না হয়ে যেন কচি খুকি হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে প্রেমের অনলে পোড়া পাগল উপাধি দিয়ে প্রতিবারের মতো মোহাবিষ্ট হয়ে পড়তে লাগলাম,,,

গুলঃ If you don’t mind, can we continue in bangla? বাংলায় মনের কথা বুঝাতে সুবিধা।

জিহানঃ I am not good writer. গুলঃ No problem. আমি বুঝে নিব।

জিহানঃ আচ্ছা বাংলা লিখছি। গুলঃ চাইলে বাংলিশেও চালানো যায়।

জিহানঃ হা হা,,,, Ok.

গুলঃ দুইবারে গিয়ে accept করেছেন।

জিহানঃ May be 2nd time, accepted,, দুঃ খিত।।

গুলঃ আমি ভেবেছি চিনতে পারেননি। It’s Okay.

জিহানঃ চিনেছি, চেহারা অবিকল, hair cut different, circumstance দেখে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি।তুমি গুল,,গুলশিরিন।

গুলঃ ধন্যবাদ।

জিহানঃ তুমিই বা কোন শহরে? রবীন্দ্র সংগীতের ভক্ত ছিলে।। সেবার আমি এক্সিডেন্ট করে পিঠের ব্যাথা নিয়ে ঢাকা ফিরেছি। Ctg হয়ে Dhaka… Ok…valo theko.. Stay blessed with almighty… সময় পেলে কথা হবে।

গুলঃ ভালো থাকবেন আপনিও।

জিহানঃ আরেক টু না হয় বলি,,, You are still in my memory … বন্ধুর বাড়ি, কাচারী ঘর সব নদীর তলে স্থান কাল হারিয়ে গেলেও স্মৃতি অম্লান, জ্বলজ্বলে।

গুলঃ হুম,,

জিহানঃ বাতানখালীর প্রতিটি অলি-গলি এখনো স্মৃতিতে জীবন্ত,, eroded by mighty river Meghna.

গুলঃ অনেক না বলা কথার হাহাকার মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে গেল।

জিহানঃ Whether I had any contact or not. না বলা কথা গুলো গুমরে গুমরে কেঁদেছে মনে সঙ্গোপনে। তোমাকে তখন ভীষণ ভালো লাগতো।

গুলঃ এখন লাগে না?

জিহানঃ But yet to Express,,,, didn’t happened. অবশ্যই লাগে।

গুলঃ অসংখ্য ধন্যবাদ। এখনো ভালো লাগে,,, শুনতে ভীষণ ভালো লাগল।

জিহানঃ আছো এখনো মনের গহীন গভীরে।। শরৎ চন্দ্রের প্রথম প্রেমের মতো। আমাকে কি তোমার ভালো লাগতো???

গুলঃ হুম।

জিহানঃ আমাদের এই ভালো লাগাটা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানে। অন্য কারো জানা দরকার নাই। জানার দরকার নাই।। May be I was not fit for you in the eyes of the creator,, That’s why he didn’t do anything… Ok,,, অনেক কথা বললাম।।

গুলঃ আমার এখনো ভাবতে খুব অবাক লাগছে, ছত্রিশ বছর পর কথা গুলো মুক্তি পেল। এতোগুলো বছর ধরে মনে মনে আপনাকে যতো বেশি ভুলতে চেয়েছি ততো বেশিই আরো যেন শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে ছিলাম। পড়ারও অনেক ক্ষতি হয়েছিল। পড়তে বসলেই অক্ষরগুলো পাল্টে আপনার মুখ হয়ে যেতো। ধুর! কারেন্ট চলে গেল।

আমাদের বাসায় ওয়াই ফাই কানেকশন থাকায় আলাদা করে নেট ব্যবহার করিনা।আম্মা, ভাইয়া,ভাবি, নীলি সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু আমার চোখ থেকেই সব ঘুম পালিয়েছে। রিফতি আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে যাওয়ার কিছুদিন পরেই ভাইয়া এবং ভাবি গিয়ে আমাদের নিয়ে এসেছিলেন।আমার ভাবির মতো ভালো মনের মানুষ এই জগতে মেলা ভার। তাই অন্য অনেকের চেয়ে আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। মাঝে মাঝে একাকী সময় গুলো অবশ্য হাজার বছরের চেয়ে ও বেশি ওজনদার মনে হতো। একজন সত্যিকার বন্ধুর খুবই অভাব বোধ করতাম সেই অপ্রতিরোধ্য সময় গুলোতে।এমন একজন যাকে মনের কথা বলে একটু হালকা হওয়া যায়।জিহানকে পেয়ে এখন আমি ফুরফুরে প্রজাপতির মতোই উড়ছি আর বারবার অতীতেই হারিয়ে যাচ্ছি। দুপরে সবাই মিলে মৌরীফুপ্পির বাসরঘর(হাতিয়াতে সাধারণ মেয়ের বাড়িতেই বাসর হয়) সাজানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল।সাজানোর মূল থিমটা জিহানের মাথা থেকে বেড়িয়েছে।অন্যরা সাহায্যকারী হিসাবে ফরমাইশ খাটছে। আবার কেউ কেউ হাস্যরসাত্মক কথা বলে হাসির মাধ্যমে পরিবেশটাকে সুমধুর করে তোলার চেষ্টা করছে।আমাকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেও আনছে না।তাই কোন সহজ কাজের দায়িত্ব ও দিচ্ছে না।কিছুক্ষণ দরজার পাশে কাচুমাচু ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জিহান যেখানে আমি সেখানে না থেকে কি পারি! শেষ পর্যন্ত সবার কাছে ফাঁকিবাজ খ্যাত আমি বিভিন্ন ডিজাইন তৈরির কাজে হাত লাগালাম আর আড়চোখে ওর দিকেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলাম। তাই হয়তো হাস্যরসাত্মক গল্প গুলো আমার কানের এপাশ থেকে ওপাশে ফুড়ুৎ করে উড়ে যাচ্ছিল।তাই সবার সাথে সমান তালে হাসিতে যোগ দিতে পারছিলাম না ।জিহান হয়তো ভাববে, কি গম্ভীর মেয়েরে! যারা আঞ্চলিক রীতিতে হাসির ফোয়ারা ছোটাচ্ছিল তারা বেশির ভাগই মধ্য বয়স অতিক্রম করেছে।তাই তাদের রসগুলো বুঝার মতো বয়স তখনো আমার হয়নি।তাই সবাই যখন হাস্যরসে মজে গিয়ে হাসির ঝর্ণাধারা ছোটালো তখন আমি নিজেকে পুরোপুরি হারালাম জিহানের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টির মধুরধারায়!

বিয়ে উপলক্ষ্যে সেদিন সন্ধ্যায় মনের মাঝে ইচ্ছার যতো রূপ আছে তার সব রূপ ঢেলে নিজেকে সাজিয়ে তুললাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মুচকি হেসেও নিলাম।হেজাক বাতির আলোতে বিয়ে বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠলো। সেই আলোতে আমি ঘুরে ফিরে ঠারে ঠুরে আমার জিহানকেই দেখছিলাম আর ওর আশেপাশেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অল্প বয়সের আবেগ আমাকে অজানা শিহরণে শিহরিত করে তুলছিল।বারবার মনে হচ্ছিল উনিও চোখের ইশারায় আমাকে কিছু বলতে চান। চোখের ভাষার দোলাচলে আমরা দুজনই দুলছিলাম আর মনে মনে অজানা স্বপ্নের জাল বুনছিলাম। ভাষাবিহীনও যে মহাকাব্য রচিত হতে পারে সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করে তনুমনে পুলক অনুভব করলাম। সেই আমাদের শেষ দেখা। বিয়ের পরের দিন থেকেই জিহান যেন কর্পূরের মতো উবে গেল।আমার চারিদিক শুধু খাঁখাঁ করতে লাগল।সারাক্ষণ ছটফট করতে করতে কিছু একটা খুঁজে ফিরি।উনি কোন কথা না বলে এভাবে চলে যেতে পারেন না।তবে কি আমারি বুঝার ভুল! লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞাসা ও করতে পারিনা। তবু সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে একবার ছোট কাকাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।উনি বিষয়টাকে তেমন পাত্তা দিলেন বলে মন হলোনা।শুধু বললেন, জিহান ভালো ছাত্র। পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝেনা।বিয়ে উপলক্ষ্যে এসে ওর নিশ্চয়ই এমনিতেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

আহারে! আমি তো জিহানের মতো ভালো ছাত্র না। তবু কেন মনে হচ্ছে আমারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। স্ট্রীমারে করে চিটাগং ফেরার পথে বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ের ক্ষরণ চোখ বেয়ে নিজের অজান্তে ঝরে সাগরের নোনাপানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেল। ভাবতে গিয়ে ও বুকটা আজো মোচড় দিয়ে উঠলো নতুন করে। শুধু কি তাই? বাসায় এসে ও জিহানের কাছ থেকে কিছুতেই দূরে সরতে পারিনা। এমনকি বই খুলে পড়ার চেষ্টা করলে বইয়ের লেখাগুলো চেঞ্জ হয়ে জিহানের অবয়ব ধারণ করে। একদিন বই খুলে পড়ার ভান করে বইয়ের পাতায় জিহানের নাম লিখছিলাম।এমন সময় যমদূতের মতো ভাইয়াকে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভীষণ চমকে উঠলাম। কোনমতে বইটা ঢেকে জিহানের নামটি আড়াল করতে চাইলাম। ভাইয়া আমার মতিগতি দেখে কিছু একটা সন্দেহ করলেন। আমার কাছ থেকে চিলের মতো ছোঁ মেরে বইটি দখল করতে চাইলেন। কিন্তু আমি তারচেয়েও দক্ষ হাতে বইটি চেপে ধরলাম।দুজনের টানাহেঁচড়ায় হঠাৎ করে বইয়ের ভিতর থেকে একটা চকলেট ফ্লোরে পড়লো। ভাইয়া হো হো করে অট্টহাসি দিয়ে বললেন,তুই কবে যে বড় হবি!বইয়ের ভাঁজে সামান্য চকলেট লুকিয়ে আমার সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠেছিস।ভাইয়ার কথাটা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।আস্তে আস্তে আমি কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে উঠলাম। তবু মনের মাঝে গুনগুনানি একই বেগে বয়ে যেতে লাগলো। কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না।কখনো কখনো উড়া উড়া ভাবে তার খবর পেলেও ঠিকানা জানিনা।

এতোদিনে সে নিশ্চয়ই আমাকে ভুলেই গেছে। তবু যখনই কলেজে কোন ছেলে আবেগ তাড়িত হয়ে পিছু নেয় তখনই আমি কাঠখোট্টা ভাবে জবাব দিয়ে ফেলি,আমি জিহানের সাথে এনগেজড। চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ও আমি একই পন্থা অবলম্বন করে আমার পিছু যেই নেয় তাকেই নিবৃত করি আর মনে মনে ভাবি আমার জিহান তো এখনো বিয়েই করেনি।সেতো এখনো আমারি আছে। রিফতি ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে আর আমি কেমিস্ট্রিতে পড়ি। চুপচাপ কিসিমের সুদর্শন রিফতি প্রথম বর্ষ থেকে ই আমার দিকে অদ্ভুত ভালো লাগার চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি অন্যদের মতো ভদ্র ভাবে ওকেও নিভৃত করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সে মনে হয় কথাটাকে একান দিয়ে প্রবেশ করিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। আমাকে ছেলেমানুষ ভেবে হেসে দেয়। আর আমি তারদিকে আরো কটমটে ভাবে তাকিয়ে থাকি।নিজের চারিদিকে এতো কঠিন বলয় তৈরী করার পরেও আমি কাকে ভালোবাসলাম তাতে যেন রিফতির কিছুই আসে যায় না।সে আমাকে ভালোবাসে এটাই যেন তার তৃপ্তি।


লেখক : হাতিয়ারই সন্তান ,জন্ম – ২৪/১২/৭৮ খ্রি:। তাঁর বাবা  মাহতাব উদ্দিন আহমেদ মিলন (ম্যানেজার সোনালী ব্যাংক), ড্যাডি আবু ইউসুফ হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ বেলাল (অবসরপ্রাপ্ত জয়েন্ট সেক্রেটারি) ।  তিনি ইডেন কলেজ থেকে গণিতে অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় গৃহিনী হিসেবে বসবাস করছেন। তাঁর লেখা ”একটি সাধারণ মেয়ের আত্মকথন” উপন্যাস বইটি পাঠকের কাছে খুবই সমাদৃত হয়েছে ।  এটি তাঁর দ্বিতীয়  গল্প। বইগুলো ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলায় ৩১৩ নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। ০১৮১৭৫৭৯২৯৪ নম্বরে যোগাযোগ করেও কুরিয়ারের মাধ্যমে নিতে পারেন।


লঞ্চ মালিকদের অতি লোভে দুর্ভোগের শিকার হাতিয়ার যাত্রীরা

যুবলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা, ইয়াবাসহ প্রধান আসামি গ্রেফতার

পাতা কুড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ শিশুর মৃত্যু

হাতিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে কিছু করার নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্ত্রীর ওপর অভিমান করে প্রবাসীর আত্মহত্যা

‘খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এর হিসাব কড়া-গন্ডায় সরকারকে দিতে হবে’

হাতিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলেন ইউএনও

নোয়াখালীতে ওয়ান শুটার গানসহ ২ তরুণ গ্রেফতার

হাতিয়ায় বিদ্যুৎ ভবন উদ্বোধন করলেন স্থানীয় এমপি

হাতিয়ায় স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

হাতিয়ায় নবাগত ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়

পকেটে মিলল গুলি, শয়ন কক্ষে ওয়ান শুটারগান, গ্রেফতার ৩

আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই : মির্জা ফখরুল

এই সম্পর্কিত আরো